কলকাতা ব্যুরো: হাসপাতালে শয্যাশায়ী থাকালীনই দলের কাজে ছুটে যেতে চেয়েছিলেন গোয়া। যদিও হাসপাতাল থেকে আর ফেরাই হল না। তবে হাসপাতালেও চুপ করে বসে থাকতে পারেননি সুব্রত মুখোপাধ্যায় বরং শয্যার উপর বসেই নিজের দফতরের জরুরি কাজকর্ম চালিয়ে যান সদ্য প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী।
শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও, দীপাবলির রাতেই এসএসকেএম-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুব্রত কিন্তু সুব্রতর এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন তাঁর সতীর্থরা। দীপাবলির সকালেরই একটি ছবি সামনে এনেছেন তাঁরা। তাতে হাসপাতালে বসেই নিজের দফতরের জরুরি ফাইল এবং কাগজে সই-সাবুদ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

ছবিতে হাসপাতালে রোগীর পোশাকেই দেখা গিয়েছে সুব্রতকে। নীল রংয়ের জামা সামনে থেকে দড়ি দিয়ে বাঁধা। মুখে মাস্ক রয়েছে। তবে চেহারায় এবং শরীরে ধকলের ছাপ স্পষ্ট। কাঠের চেয়ারে বসে বাঁ হাতে ফাইল ধরে রেখেছেন। চেয়ারের হাতলে রাখা ডান হাতে ভর করে সই করছেন।
সুব্রতর সতীর্থরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে এসএসকেএম-এর উডবার্ন ওয়ার্ডেই ছবিটি তোলা হয়। নিজেই একগাদা ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। একে একে সেগুলিতে চোখ বোলান। যেখানে যেখানে সই করা প্রয়োজন, তা-ও করে দেন। এমনকি কোন কাজ কতদূর এগিয়েছে, আটকে থাকা কাজ কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হেব, সেই নিয়েও নিজের দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

সদ্য প্রয়াত মন্ত্রীর এই ছবি সামনে আসতে রাজনৈতিক মহলে তো বটেই, নেটমাধ্যমেও সাড়া পড়ে গিয়েছে। কী অসম্ভব প্রাণশক্তি থাকলে, কাজের প্রতি কতটা নিবেদিত প্রাণ হলে, স্টেন্ট বসানোর ধকল বুকে নিয়েই হাসপাতাল থেকে কাজ করে যেতে পারেন, তা উপলব্ধি করেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সকলে।
সকলেই একমত যে, কাজ অন্তঃপ্রাণ মানুষটির অসুস্থতাও তাঁকে থামাতে পারেনি। শুক্রবার সুব্রতর মরদেহকে যখন শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেছেন তাঁর সতীর্থরা, সেই সময় বিধানসভার করিডরে তাঁর সতীর্থদের বলতে শোনা যায়, এমন মানুষ আর হবে না ৷ প্রশাসন থেকে, দল নির্বিশেষে, সকলের কাছে প্রণম্য ছিলেন ৷ খুব ক্ষতি হয়ে গেল ৷

জীবনের একটা বড় অংশ কংগ্রেসে এবং বাকি সময়টা তৃণমূলে কাটিয়েছেন তিনি। এরাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া কনিষ্ঠতম ব্যক্তির রেকর্ড এখনও তাঁর দখলেই। বছর কয়েক আগেই প্রথম হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয় তাঁর শরীরে ৷ সতীর্থদের দাবি, তখন থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু।

বুকে ব্যথা হওয়ায় গত ২৩ অক্টোবর এসএসকেএম হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে যান সুব্রত ৷ সেখানেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ধরা পড়ে। কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে উডবার্ন ওয়ার্ডের আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকেই সুব্রত সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত সোমবার তাঁর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়। বুকে বসানো হয় দু’টি স্টেন্ট। এরপর ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকেই এগোচ্ছিলেন তিনি কিন্তু দীপাবলির রাতে আচমকা পরিস্থিতির অবনতি হলে, আর ফেরানো যায়নি তাঁকে। রাত ৯টা বেজে ২২ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুব্রত।