এক নজরে

মহালয়া : গল্প ও তাৎপর্য

By admin

September 16, 2020

ইন্দ্রনীল বসু

রাত ফুরোলেই মহালয়া। আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠবে শঙ্খ ধ্বনি। ভোর হতেই শোনা যাবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণর শাশ্বত কণ্ঠ। তারপর ঘাটে ঘাটে তর্পণ। পূর্বপুরুষ, ঋষি, গুরু ও পিতা মাতার উদ্দেশ্যে জল ও খাবার দানের পর্ব শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু এই মহালয়ার হয় কেন ? কিই বা এর তাৎপর্য ?

পিতৃ পক্ষের অবসান , দেবী পক্ষের শুরু এই মহালয়া। পিতৃ পক্ষকে দুঃখের দিন বলে ধরা হয় হিন্দু মতে । এই সময় শ্রাদ্ধ বা ওই ধরনের ক্রিয়া হয়।১৬ দিনের এই সময়টিতে পূর্বপুরুষদের মনে করে তাদের উদ্দেশ্যে সব কিছু করা হয়ে থাকে। জল ও খাবার দেওয়া হয় পিতৃপুরুষদের।

মহালয়া নিয়ে প্রচলিত অনেক গল্প আছে। বিশ্বাস মা দুর্গা এই সময় শিবকে ছেড়ে কৈলাশ থেকে তার বাপের বাড়ি মর্তে আগমন করেন। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ,স্বরস্বতি সবাই আসেন তার সঙ্গে । কখনো পালকি, কখনো হাতি বা ঘোড়া আবার কখনো নৌকায় আগমন হয় মা দুর্গার। সাধারণত কৈলাশ থেকে মর্তে আসতে সময় লাগে ৭ দিন। এবারে যদিও সময়টা ৩৫ দিন। এমন কেন হলো জানেন না অনেকেই। হিন্দু অনেক বাড়িতে পিতৃ তর্পণ ও পিন্ড দানের অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে এই দিনটিকে উপলক্ষ করে।

তবে আর একটি গল্প ও প্রচলিত আছে। মহাভারতের যুদ্ধ শেষে কর্ণ স্বর্গে গিয়ে হাজির হবার পর নাকি তাঁকে অন্নর পরিবর্তে সোনা , রুপা খেতে দেওয়া হয় বলে কথিত রয়েছে। কর্ণ তখন দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে এর কারণ জানতে চান । ইন্দ্র তাকে বলেন তিনি মর্তে জীবিতকালে মানুষকে সোনা রূপা দান করেছেন। অন্ন দান করেন নি তার পিতৃপুরুষদের। কর্ণ জানান তার পিতৃ পুরুষ সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। মাতা কুন্তী কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে তাকে এই বিষয় জানান। কর্ণকে তখন দেবরাজ ১৬ দিন সময় দেন মর্তে গিয়ে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জল ও খাবার দান করার।

এই ষোলো দিনই পিতৃপক্ষ বলে হিন্দু শাস্ত্র মতে উদযাপন করা হয়ে থাকে। এই সময়টা হিন্দুদের কাছে শোকের বা দুঃখের সময় বলে বিবেচিত। এই শোকের দিনে পিতৃপুরুষদের তুষ্ট করার রীতি চলে আসছে সেই থেকে। বিশ্বাস পিতৃপুষদের আশীর্বাদ পেলে জীবনে আনন্দ আসে। ধনসম্পদ লাভ হয়।

এই দিনের আর একটা বিশেষত্ব আছে। কুমোরপাড়াতে এই দিন মায়ের চক্ষু দান হয়। এই চক্ষুদান দেখার জন্য ভিড় ও হয় প্রচুর। বেশিরভাগ তরুণ তরুণী আর ফটোগ্রাফারদের।

শাস্ত্র মতে ২০২০ সালে মায়ের আগমন হবে দোলায়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছে, দোলায় আগমন মনে মড়ক ও মহামারী। দেবীর গমন গজে । গজে চড়ে গমনের ফল শুভ। করোনা কি বিদায় নেবে। দুর্গতিনাশিনী এই দুর্গতি থেকে সবাইকে মুক্ত করবেন এই আশায় বুক বেঁধে আছে কলকাতা থেকে লন্ডনের বাঙালি সমাজ।