কলকাতা ব্যুরো: শনিবারের পুরভোটে চার পুরকেন্দ্রে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর সামনে এসেছে। কমিশনের সর্বাধিক সতর্ক নজর রয়েছে বিধাননগরে। সেখানে যাতে কোনওরকম কোনও বিক্ষোভের ঘটনা না ঘটে সেদিকেই বিশেষ নজর দিয়েছে কমিশন। কিন্তু, তারপরেও শনিবার সকালে বেশ কয়েকটি বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর সামনে আসে। এ বার সরাসরি বিধাননগর পুলিশ আধিকারিকদের ফোন করে বিশেষ বার্তা দিল কমিশন। স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হল, কোনওরকম অশান্তির সৃষ্টি হলেই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের নির্দেশ। পাশাপাশি, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে পুলিশ কর্তারা গিয়েছেন বলে খবর সূত্রের।
সূত্রের খবর, প্রথম থেকেই বিধাননগরে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে কমিশন। হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল, বিধাননগরে পুরনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে না হলে তার দায় নিতে হবে কমিশনকে। তাই নজরদারিতে কোনওরকম ফাঁক রাখতে চাইছে না কমিশন। শুক্রবার রাত থেকেই রাজ্য পুলিশ ছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছে কমান্ডো, ইএফআর, এসটিএফ। স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে কড়া নজরদারি রাখছেন সিআইডি ও আইবির অফিসাররা। নিযুক্ত করা হয়েছে আইএএস পদমর্যাদার এক অফিসারকেও। বিধাননগরে বিধানে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি বা কোনওরকম অশান্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ দায়িত্বে থাকছেন এডিজি এসটিএফ সিআইডি জ্ঞানবন্ত সিং। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলে হয়েছে বিধাননগর।
শনিবার সকালে যদিও কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীর নজর এড়িয়ে একাধিক ওয়ার্ডে ভুয়ো ভোটারের খোঁজ মেলে। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভুয়ো ধরতে কার্যত বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থীর মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করে কমিশন। অন্য়দিকে, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বুথের শৌচালয় থেকে ভুয়ো ভোটারদের পাকড়াও করা হয়। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ভুয়ো ভোটার ধরা পড়ার অভিযোগ ওঠে।
এই পরিস্থিতিতে কোনওরকম অশান্তি রুখতে বিধাননগর পুলিশ আধিকারিকদের ফোন করে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের নির্দেশ দেয় কমিশন। সমস্ত আইপিএস অফিসারদের ফোন করে বলা হয়, কোনওরকম কোনও অশান্তির চিহ্ন দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পদক্ষেপ করবে। কোনওভাবেই যেন রেয়াদ না করা হয়। বিশ্লেষকদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, হাইকোর্টের নির্দেশের কথা মাথায় রেখেই দিনশেষে ‘গুডবয় ইমেজ’ ধরে রাখতে তৎপর কমিশন। তার জেরেই এই পদক্ষেপ।
বিরোধীরা বারবার কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর আর্জি জানিয়েছিল। কিন্তু, রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এদিকে, কমিশের ভূমিকায় প্রথম থেকেই অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট। এই পরিস্থিতিতে যদি কোনওরকম কোনও বড় বিক্ষোভ বা অশান্তি হয়, তাহলে কমিশনকে দায়বদ্ধ থাকতেই হবে। নয়ত, রাজ্যের বাকি পুরভোটগুলিতে কমিশনের হাত থেকে ক্ষমতার রাশ চলে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্যপুলিশের বদলে পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও নির্বাচন করানো হতে পারে। তাই আগেভাগেই কড়া কমিশন। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই পুলিশকে কঠোর নির্দেশ কমিশনের এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
আগে, বিধাননগরের ভোটের জন্য ২ হাজার ৮০০ পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে, নতুন করে পুলিশ মোতায়নে করায় বিধাননগরে মোট সাড়ে চার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উল্লেখ্য, এই প্রথম ইএফআর এসটিএফ দিয়ে ভোট করানো হচ্ছে। বিধাননগরের নির্বাচন প্রক্রিয়া যাতে নির্বিঘ্নে হতে পারে, তার জন্য সজাগ পুলিশ এবং কমিশন।