কলকাতা ব্যুরো: পেট্রোল-ডিজেলে ভ্যাট কমানোর দাবিতে সোমবার পথে নামল বিজেপি। কলকাতা পুলিশের কোনও রকম অনুমতি নেই এই মিছিলে। তবুও সেই নির্দেশ অমান্য করেই পথে নেমেছে বিজেপি। এদিকে বিজেপির এই মিছিল শুরু হতেই চড়তে শুরু করে উত্তাপ। পরিস্থিতি আঁচ করে পুলিশ নিরাপত্তার কড়া দুর্গ তৈরি করে রাখে। আর মিছিল শুরুর পরই শুরু হয় ধরপাকড়। ৬ মুরলীধর সেন লেন থেকে মিছিল বেরোতেই শুরু হয় উত্তেজনা।

মিছিলে রয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, মিহির গোস্বামী, দেবশ্রী চৌধুরী, জগন্নাথ সরকাররা। রয়েছেন বিজেপির একাধিক পরিচিত মুখ। এদিন ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, দেবশ্রী চৌধুরীরা। পাল্টা পুলিশও অনড়। পরে একে একে দলীয় কার্যালয়মুখী হন তাঁরা। যাওয়ার আগে শুভেন্দু অধিকারী বলে যান, আরও বৃহত্তর শক্তি নিয়ে নবান্ন অভিযানে যেতে পারেন তাঁরা।

শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, তথাকথিত বাংলার মেয়ে এখনও ঘুমোচ্ছেন। তথাকথিত মানব দরদী একেবারে সাধারণ লোকের কষ্টে নাকি তাঁর চোখের জল আর নাকের জল এক হয়ে যায়। তাঁর ঘুম ভাঙেনি। আমাদের নেতারা বলেছিলেন ২০০-৪০০ মিটার হাঁটতে দিন। আমরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙতে আসেনি। আমরা এখানে আইন শৃঙ্খলার অবনতি করতে আসিনি। অথচ অবস্থাটা দেখুন। চারদিক ঘিরে রেখেছে। শুধু গোটা কলকাতা পুলিশ নয়, রাজ্য পুলিশও নিয়ে চলে এসেছে। হাজার পুলিশ দিয়ে গোটা ২০০-৩০০ মিটার এলাকায় চক্রব্যূহ তৈরি করা হয়েছে। গাড়ির লাইন, লালবাজারে নিয়ে যাবে। লালবাজারে নিতে গেলে এই মুহূর্তে ২০০টা বাস লাগবে। আরও লোক আসবে। দিকে দিকে যত বাড়বে, বিজেপি তত বাড়বে। আমরা এখান থেকে দাবি করি মুখ্যমন্ত্রী নিদ্রা ভাঙুন। আপনি ভ্যাট কমান। কেন্দ্রের দেখানো পথে হাঁটুন। জনগণকে সুরাহা দেখান।

বিজেপি নেতা রীতেশ তিওয়ারি-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাকে ইতিমধ্যেই প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়েছে। রীতেশ তিওয়ারির বক্তব্য, বাংলার মানুষের স্বার্থে আমরা পথে নেমেছি। তাই গ্রেফতার হতে হচ্ছে। এরা ত্রিপুরায় গিয়ে বড় বড় কথা বলে।

পুলিশের বক্তব্য, এই মিছিলের জন্য বিজেপির কাছে কোনও অনুমতি নেই। দ্বিতীয়ত, কোভিডের কারণে এই জমায়েতে কোনও ভাবেই অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। বিজেপির বক্তব্য, পেট্রোপণ্যের উপর থেকে শুল্ক কমিয়েছে কেন্দ্র। এরপরই একাধিক রাজ্য নিজেদের ভ্যাটের পরিমাণও কমিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তা করেনি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, মানুষের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ভ্যাট কমাতেই হবে। সেই কারনেই এদিনের প্রতিবাদ কর্মসূচী।

এদিকে মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য দফতর থেকে মিছিল এগোতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন দলীয় কর্মী সমর্থকরা। মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। বিজেপির সদর দফতরে প্রবেশের মুখে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়। সেই ব্যারিকেড ভাঙতে গেলেই শুরু হয় ধস্তাধস্তিও। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ অবরোধের চেষ্টা করে বিজেপি। যদিও পুলিশের অতি সক্রিয়তায় তা সম্ভব হয়নি।

সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, কেন্দ্র শুল্ক কমানোর পর সমস্ত রাজ্যকেও ভ্যাট কমানোর আবেদন করেছে কেন্দ্র। তৃণমূল যে মানুষকে দেখানোর জন্য আন্দোলন করে সেটা বোঝা গেল। তাই ভ্যাটের লভ্যাংশ তো কমাচ্ছেই না। উল্টে আমাদের কন্ঠ প্রতিরোধের চেষ্টা করছে।

রাহুল সিনহার বক্তব্য, আমরা জানি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেট্রোল ডিজেলের ভ্যাটে ছাড় দেবে না। আপনারাও তা জানেন। কারণ, ওনারা খেতে জানেন। দিতে কখনও জানেন না। কাটমানি নেওয়া ওদের কাজ। মানুষকে বিলিয়ে দেওয়া ওদের কাজ নয়।

দিলীপ ঘোষ বলেন, আমরা ভেবেছিলাম দীপাবলির আগে প্রধানমন্ত্রী মানুষকে খুশি করলেন, দিদিও সেই রাস্তায় হাঁটবেন। দীপাবলি, ভাইফোঁটায় তো হল না। আশা করছি ছটপুজোয় কমাবেন। লোকে বাইক কিনেছেন। এতদিন ট্রেন বন্ধ করে রেখেছিলেন মানুষকে ক্ষ্যাপানোর জন্য। বাসের ভাড়া বাড়ছে বলে লোককে তাতানোর জন্য বলে বেড়াতেন। এবার কেন্দ্র তো কমাল শুল্ক, রাজ্য কমাক। উনি কমাবেন না জানি। কাটমানি খেয়ে অভ্যাস, জিনিসের দাম কি আর কাট করবেন? তাঁর ভাইরা গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি চেপে নাটক করেছিলেন। এখন কোথায় তাঁরা?

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, দিদির কানে যে পর্দা পড়ে গিয়েছে, তা ঘণ্টা বাজিয়ে খোলার জন্য আমরা একটা আন্দোলনের আয়োজন করেছিলাম। দিদিকে বলতে চাই, আপনি তো চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রীকে পেট্রোল ডিজেলের দাম কমানোর জন্য বলেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কর্তব্য পালন করেছেন। পেট্রোল-ডিজেলে লিটার পিছু ৫ টাকা, ১০ টাকা কমিয়েছেন। অথচ দিদি কথায় কথায় আপনি বলেন এগিয়ে বাংলা, সে বাংলা এখন বসে থাকবে? দিদি আপনাকে উত্তর প্রদেশ, ত্রিপুরা গোল দিয়ে চলে গেল, আর আপনি ঘুমোচ্ছেন?

সুকান্ত মজুমদার আরও বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা রাজ্যের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে জন সচেতনতা মূলক প্রচার চালাবে বিজেপি। মানুষকে বোঝাবেন কেন্দ্রের কর কত? কেন্দ্র কতটা শুল্ক কমিয়েছে। বাংলা ২৫ শতাংশ ভ্যাট নেয়। সেখান থেকে এক পয়সা কমায়নি। এসব আমরা লিখে গলায় প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে বেরোবো। গ্রাহকদের কিছু বলতে হবে না, ওনারা গলার প্ল্যাকার্ড পড়েই সবটা বুঝে যাবেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version