কলকাতা ব্যুরো: অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত বাগের চূড়ান্ত রিপোর্টেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে বিস্তর অনিয়মের কথা উঠে এলো। শুক্রবারই বিচারপতি এস পি তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে বাগ কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ তালিকা থেকে ৩৮১ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ পত্র দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ২২২ জন পার্সোনালিটি টেস্টেই বসেননি। এছাড়া মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় সহ পর্ষদ ও কমিশনের একাধিক কর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে বাগ কমিটি। ১৮ মে রায় ঘোষণা হওয়ার হওয়ার কথা।

রিপোর্টে কি কি উল্লেখ করা হয়েছে? দেখুন এক নজরে!

৩৮১ জনকে প্যানেলের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।

অসফল প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ভূতুড়ে নিয়োগপত্র তৈরি করে। সেখানে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের আধিকারিক অশোক কুমার সাহা, শান্তি প্রসাদ সিনহা সৌমিত্র সরকারের নির্দেশে প্রোগ্রাম অফিসার সমরজিৎ আচার্য ও পর্ণা বোস ভুয়ো নিয়োগপত্র তৈরি করেন।

প্যানেলের র‍্যাঙ্ক পরিবর্তনের জন্য মূল দায়ী অশোক কুমার সাহা, শান্তি প্রসাদ সিনহা এবং সৌমিত্র সরকার।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান সুবিরেশ ভট্রাচার্য, শর্মিলা মিত্র, চৈতালী ভট্টাচার্য, মহুয়া বিশ্বাস, শুভজিৎ চট্রোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কারণ তাঁরাও এই ভুয়ো নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।

৩০ আগস্ট, ২০১৯ সৌমিত্র সরকার ও শান্তি প্রসাদ সিনহা প্যানেলের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর জেলা ডিওয়াইদের থেকে ভ্যাকেন্সি সংগ্রহ করেছেন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। প্যানেলের সময়সীমা ছিল ১৮ মে, ২০১৮।

শান্তি প্রসাদ সিনহার নির্দেশে সমরজিৎ আচার্য ৩৮১ জনের সুপারিশপত্র তৈরি করেছেন।

বহু চাকরি প্রার্থীর ওএমআর শিট পরিবর্তন করে নম্বর বাড়ানো হয়েছে। শান্তি প্রসাদ সিনহা, সৌমিত্র সরকার এবং অশোক কুমার সাহা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে প্যানেল পেরিয়ে যাওয়ার পর ৩৮১ জনের নিয়োগপত্র তৈরি করেছেন।

বাগ কমিটি স্কুল সার্ভিস কমিশনের ৫ রিজিওনাল চেয়ারম্যানকেও এই বেনিয়মের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তাঁরা হলেন শর্মিলা মিত্র, চৈতালি ভট্টাচার্য, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মহুয়া বিশ্বাস এবং শেখ সিরাজউদ্দিন। এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিভাগীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, এসএসসির দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার সুকুমার সাহা, এসএসসির প্রোগ্রাম অফিসার সমরজিৎ আচার্য, উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৫, ৪৬৮, ৪১৭, ৩৪ এবং ১২০ বি ধারায় এফএইআর রুজু করে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এসএসসির আরও এক প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে বাগ কমিটি।

বাগ কমিটি জানিয়েছে, শান্তি প্রসাদ সিনহা ৩৮১ জন অসফল প্রার্থী নিয়োগের সুপারিশপত্র নিজের হাতে নিয়ে যান পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময়ের চেম্বারে। পর্ষদ সভাপতিও এই ৩৮১ জনের নাম কেন সুপারিশ করেছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিটি। কমিটি মনে করে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ফৌজদারি মামলা করা উচিত। তবে এখানেই শেষ নয়, কমিশনের চেয়ারপার্সনের স্ক্যান করা স্বাক্ষর ব্যবহার করে সুপারিশ পত্র তৈরি করা হয়েছে। সমরজিৎ আচার্য নিজে ৩৮১টি সুপারিশ পত্র তৈরি করেছিলেন।এছাড়া আরও অনেক বেনিয়ম ধরা পড়েছে নিয়োগের ক্ষেত্রে।

আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, বাগ কমিটির রিপোর্টে গ্রুপ সি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। এর জন্য সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে জানান, আদালত তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিসকে দিয়ে সিট গঠন করে দিক। রাজ্যেও তদন্ত করার জন্য ভালো পুলিস অফিসার রয়েছেন।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলেও পিসি-ভাইপোর নাম উঠে আসবে, আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক বলেছেন, লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর চোখের জল বৃথা হতে পারে না। 

তবে শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নন, শুভেন্দু অধিকারী এদিন এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করে বলেন, শাসকের এজেন্টরা সারা রাজ্যে মেধা তালিকা তালিকা ভেঙে, শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের বঞ্চিত করেছে। টাকার বিনিময়ে এইসব কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। যতই কমিটি তৈরি করা হোক না কেন, কোন কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version