কলকাতা ব্যুরো: একদিকে নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তো অন্যদিকে ৬ বছর পর বিপুল নিয়োগের নির্দেশ। দুই বিপরীতধর্মী পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এমন অবস্থায় কমিশনের চেয়ারম্যান বদল করলে রাজ্য সরকার। ৪ মাস আগেই এসএসসির চেয়ারম্যান পদে এসেছিলেন সিদ্ধার্থ মজুমদার। বুধবার সন্ধেয় তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে সূত্রের খবর। বদলে তাঁর জুতোয় পা গলালেন আইএএস শুভ্র চক্রবর্তী।

তবে বুধবারই রাত সাড়ে ১২ টার মধ্যে সিআরপিএফ এসএসসি ভবনের দখল নেবে বলে খবর। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত কেউ যাতে ঢুকতে না পারে ওই ভবনে সেই বিষয়ে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি আরও জানা যাচ্ছে, বুধবার বিকেলের পর থেকে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ জমা দিতে হবে আজ আদালতের ১২টার মামলায়।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের চেম্বারে দেখা করেন চাকরি বঞ্চিত মামলকারীদের দুই আইনজীবী। এসএসসি চেয়ারম্যান পদত্যাগের পরেই নিয়োগ কমিটির ঘনিষ্ঠ কে বা কারা ওই ভবনে ঢুকে কম্পিউটারে থাকা তথ্য ডাটা বেস নষ্ট করছে বলে তাদের কাছে খবর আছে বলে জানান। এরপরই এদিন রাতেই পদক্ষেপের জন্য আদালত বসানোর অনুমতি মেলে প্রধান বিচারপতির কাছে থেকে। রাত পৌনে ১১ টা নাগাদ মামলা শুরু হয়। কিন্তু অর্ডার লেখা বা সংশ্লিষ্ট এই সংক্রান্ত আদালতের কাজকর্ম যে সব কর্মী ও অফিসার সাধারণভাবে করেন, এত রাতে তাদেরও উপস্থিত করা যায় নি। তাই রেজিস্ট্রার পদ মর্যাদার অফিসারকে অর্ডার লিখতে হয়। কম্পিউটার কর্মীর হাইকোর্টে হাজির হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় বিচারপতিকে। শেষ পর্যন্ত সবাই এলে বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য দ্রুত এসএসসি অফিসে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেন।

যদিও রাতে সরকারের তরফে হাইকোর্টে কেউ ছিলো না। ফলে আদালত এক পক্ষ শুনেই অতি জরুরি ও গুরুতর অভিযোগ উপলব্ধি করে রাত সাড়ে ১২ টায় এসএসসির অফিস সল্টলেকের আচার্য্য সদনে সিআরপিএফ নিরাপত্তা বসানোর নির্দেশ দেয়। এসএসসির সচিবকে আজ ওই ভবনের যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে দুপুর ১২ টায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর রাত প্রায় পৌনে ১২ টায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের চেম্বার থেকেই আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত ও ফিরদৌস শামিম সল্টলেকে সিআরপিএফ অফিসে ফোন করেন। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে অফিসারদের সম্পূর্ণ বোঝানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই রায়ের কপি জওয়ানদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে বলে খবর।

উল্লেখ্য, ২০ হাজারেরও বেশি পদে শিক্ষক নিয়োগ করতে চলেছে সরকার। আগে যে নিয়মে নিয়োগ হত তাও বদলাবে। এবার প্রথম প্রিলিমিনারি, মেইন এবং ইন্টারভিউয়ের পর মিলবে চাকরি। আগামী মাসে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্কুলশিক্ষা দপ্তর। নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ এই দুই ধাপের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এসএসসি। ফর্ম কবে থেকে দেওয়া শুরু, তার দাম কত, কবে পরীক্ষা এবং চূড়ান্ত শূন্য পদ কত তা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হবে।

সূত্রের খবর, নবম-দশম স্তরে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার শূন্যপদ। একাদশ-দ্বাদশ স্তরের শূন্যপদ ৬ হাজারের কিছুটা বেশি। গত ৫ মে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছভাবে হবে নিয়োগ। জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এসএসসির চেয়ারম্যান পদে আইএএস অফিসারকে বসানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালের নিয়োগের যে প্যানেল হয়েছিল তার মেয়াদ বেড়েছে। ৬৮৬১ টি নতুন পদ তৈরি হয়েছে। নবম–দশম, একাদশ–দ্বাদশ, শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষা মিলিয়ে এই সংখ্যক শিক্ষক আলাদাভাবে নিয়োগ করবে সরকার। ধর্মতলা চত্বরে আলাদা তিনটি ক্যাম্পে আন্দোলনকারীরা নিয়োগপত্র না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন বলে এদিন ঘোষণা করেছেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version