মৈনাক শর্মা
প্রাচীন কাল থেকেই ভারত সভ্যতার কেন্দ্র বিন্দু। এই মাটিতেই গড়ে উঠেছিল হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা। বাঙ্গালী প্রফেসার রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই শুরু হয় যে খোঁজ বর্তমানেও চলছে সেই ইতিহাসের খোঁজ। রাজস্থানের থর মরুভূমিতে এমনই ঐতিহাসিক আবিষ্কৃত হস্তচিত্র সাড়া ফেলে দিয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক দুনিয়ায়। মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আবিষ্কার হয়েছে হাতে আঁকা ছবির সম্ভার। বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে বলে ‘জিওগ্লিফ’। তর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে, এটাই হয়তো বিশ্বের বৃহত্তম হস্তচিত্র। ‘সায়েন্স ডিরেক্ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই আবিষ্কারের বিবরণ।
আমরা আদিম মানুষের গুহা চিত্র দেখেছি, একই ভাবে জিওগ্লিফ একপ্রকার হতে আঁকা ছবি । মুলত এই ছবি বালি ও পাথর দিয়ে খোদাই করা হয় পৃষ্ঠতলে। মাটির নিচে ঠিক জীবাশ্ম পাওয়ার মতনই রাজস্থানের বোহা গ্রাম সংলগ্ন মরুভূমিতে ড্রোন ব্যবহার করে আবিষ্কার হয়েছে এই হস্তচিত্র। এর নেপথ্যে রয়েছে বাবা-ছেলের জুটি, কার্লো এবং ইয়োহান ওথেমার। ফরাসি গবেষকদের মতে, এই ছবিগুলি কমপক্ষে দেড়শো বছর পুরনো। তার চারপাশে ছড়ানো হিন্দু স্মারক পাথরের সঙ্গে এই ছবির যোগসূত্র রয়েছে বলেও মনে করেন তাঁরা। দুটি জ্যামিতিক নকশা দিয়ে তৈরি হয়েছে এই হস্তচিত্র।
একটি বিশাল মাকড়সা এবং অন্যটি সাপের মতো নকশা। দুইয়ের মধ্যে টানা অনেকগুলি লাইন। ২০.৮ হেক্টরের বেশি এলাকা জুড়ে ছড়ানো রয়েছে এই নকশা। এর তিনটি প্রধান কেন্দ্রে রাখা রয়েছে স্মারক পাথর। গবেষকদের বিশ্বাস, এই ছবির পিছনে রয়েছে প্লেনিমেট্রিক জ্ঞান। বৃহত্তম জিওগ্লিফ বোহা-১ প্রায় ১২ কিমি দীর্ঘ। রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদি কাজে এই বিজ্ঞান ব্যবহৃত হয়। বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে বালি বা পাথর সরিয়ে হাতে আঁকা ছবিকে ‘জিওগ্লিফ’ বলা হয়। বিশ্বের নানা জায়গায় এরকম হস্তচিত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে সেগুলি কেন আঁকা হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম ‘জিওগ্লিফ’ আবিষ্কৃত হল। তা-ও আবার বিশ্বের বৃহত্তম।