এক নজরে

বামপন্থী সৌমিত্রর শেষ যাত্রায় একই পথে ডান থেকে বাম

By admin

November 15, 2020

কলকাতা ব্যুরো: বেলভিউ হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে তার মেয়ে পৌলমী বসু সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাড়িয়ে ভুয়সী প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার বাবাকে যেভাবে রাজ্য সরকার সম্মান জানিয়েছেন, তাতে তিনি অভিভূত বলে জানালেন। মুখ্যমন্ত্রীও প্রবাদপ্রতিম শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, একজন শিল্পী নন, তিনি যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সংক্ষেপে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আবার তার মেয়ে গল্ফ গ্রীন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন, কমরেড চলে গেল। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যে তার রাজনৈতিক বিশ্বাস সম্পর্কে কোনদিন লুকোছাপা করেননি তা জানেন তার অতি বড় শত্রুও। তাই অনেক ক্ষেত্রে তিনি যোগ্য সন্মান ও পাননি। কিন্তু নিজের বিশ্বাস থেকে সরে গিয়ে আখের গোছানোর জন্যে কোনো চেষ্টাই করেননি।

নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় শিল্পী হিসেবে যখন অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন সহ গোটা টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়া বামেদের বিরুদ্ধে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে গলা ফাটিয়েছে, তখনো তিনি ছিলেন নিজের জায়গায়। কারো বিরুদ্ধে অসন্মান জনক মন্তব্য করেননি। আবার অযথা কাউকে ঢাল হয়ে বাঁচাতে উল্টোপাল্টা মিথ্যে যুক্তি সাজাননি।

[3d-flip-book mode=”fullscreen” id=”20012″ ][/3d-flip-book]

তারপরে রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। তার আগেই সিঙ্গুর, ভাঙ্গর, নন্দীগ্রাম ও সবশেষে লালগড়ের ঘটনায় এরাজ্যে বামপন্থীদের একেবারে কোণঠাসা করে দিয়েছে সারা দেশ। শিল্পীরাও তার বিপরীতে যাননি। গুটিকয়েকের মধ্যে থেকে তখনও নিজের বক্তব্য স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছেন সৌমিত্র। নতুন সরকার আসার পরেও তার সঙ্গে কোনদিনই তৃণমূলের তেমন সখ্যতা ছিল না। নানান সময় তাঁকে যদিও সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করেছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু ধীরে ধীরে এক সময়ের পরে তিনি আর দূরে সরে থাকতে পারেননি নিজেকে। তার সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক মতের অমিল হলেও তিনিও সৌজন্যে দেখিয়েছেন। তারই ফলে শেষ দিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকার তাকে বিশেষ সম্মান দিয়ে মঞ্চে আনতে পেরেছে।

তিনি অবশ্য তার বামপন্থী ভাবধারা থেকে কখনোই পিছু সরেননি। তাঁর আদর্শ, তার চিন্তা, তার ভাবনা, তার শিক্ষা-সংস্কৃতি– সবাই ছিল বাম ভাবধারায় জারিত। তাই তার মৃত্যুর পরমুহূর্ত থেকে যখন শেষ যাত্রায় তার মরদেহ নিয়ে বের হওয়া শেষ যাত্রায় সামনে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসকদল, তখন মিছিলের একেবারে শেষ দিকে বৃদ্ধ বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, মনোজ ভট্টাচার্য থেকে বামপন্থীরা। রবীন্দ্রসদনে আর পাঁচজন আমজনতার মত তাদের এই বর্ষীয়ান কমরেডকে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন বামপন্থী নেতা ও কর্মীরা। তারপরে মিছিলের শেষে হাঁটলেন রবীন্দ্র সদন থেকে কেওড়াতলা পর্যন্ত– কমরেডের বিদায় বেলায়।