কলকাতা ব্যুরো: বাড়ির মাথায় ছোট্ট এক মোবাইল টাওয়ার বসাতে চায় সংস্থা। এর বিনিময় প্রতি মাসে বাড়ির মালিককে দেওয়া হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তারই সঙ্গে সেই টাওয়ার দেখ ভাল করার জন্য একজন লোক নিয়োগ করতে পারবেন মালিক। তার জন্য পাবেন আরো প্রায় ১৪ হাজার টাকা। আবার সেই মোবাইল বসানোর জন্য এক লপ্তে পাঁচ লক্ষ টাকা দেবে সংস্থা। হাতে চাঁদ পাওয়ার মতই হোটরের এক বাড়ির মালিক ফোনে এমন অফার পেয়ে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি।

এরপর থেকে সেই ফোনের উল্টোদিক থেকে যেমন যেমন ভাবে নির্দেশ এসেছে, যেমন তেমন ভাবেই এগিয়ে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ পাল নামে ওই ব্যক্তি ইতিমধ্যেই ওই টাওয়ার বসানোর জন্য প্রসেসিং ফি বাবদ দফায় দফায় এক লক্ষ টাকা তার থেকে প্রতারণা করে নিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। ৫ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি।

এই ঘটনায় পুলিশ তদন্তে নেমে মোবাইল টাওয়ার বসানোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার রাত থেকে সোনারপুর থানা অভিযান চালায় বিধান নগর সেক্টর ফাইভের একটি কল সেন্টারে। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ডায়ালার সহ জাল স্ট্যাম্প পেপার প্রতারণার নানান রকম নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।

এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, এই চক্রটি আপাতত দক্ষিণ ২৪ পরগনা কে টার্গেট করেছিল। প্রতারণার জন্য বিভিন্ন লোকের মোবাইলে ফোন করে তার নিজের বাড়ি কি না সে ব্যাপারে খোঁজ নিত। তারপরেই মোবাইল টাওয়ার বসানোর জন্য প্রস্তাব দিত। আর সঙ্গে দেওয়া হতো বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার অফার। তাতেই অনেকে জালে ধরা দিত। এর পরেই শুরু হতো প্রতারকদের ওই টাওয়ার বসানোর নামে ধীরে ধীরে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খেলা।

কখনো টাওয়ার বসানোর ফি বাবদ আবার কখনো এই টাওয়ার বসানোর জন্য ট্রাই এর অনুমতির জন্য টাকা হিসেবে বহু লোকের থেকে প্রচারণা করে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকা ওই চক্রটি তুলে ফেলেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

এমনিভাবে সোনারপুরে প্রতারকদের খপ্পরে পড়তে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই এমন টাওয়ার বসানোর জন্য ফোন করে প্রস্তাব দেয়। কিছুটা অবাক লেগেছিল এত টাকা দেবে বলায় আরো বেশি চমকে গিয়েছিলাম। তাই ওদেরকে প্রথম দিন কথা বলার পর যখন অফিসের ঠিকানা জানতে চাইলাম, তখনই আমতা আমতা করতে থাকে। তারপরে এমন টাওয়ার এই এলাকায় বসানো হয়েছে এমন কোন রেফারেন্স দেওয়ার কথা বলতেই এড়িয়ে যায় কোম্পানির গোপনীয়তার যুক্তি দিয়ে। এরপর আর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশকে দিয়ে যে ফোন থেকে কল করা হয়েছিল তার নম্বর যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় উত্তর প্রদেশ থেকে সেই সিম তোলা হয়েছে। তারপরে বুঝতে পারি ঠগেদের পাল্লায় পরতে চলেছিলাম।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version