এক নজরে

#SpecialReport : ওঁরা থাকে ওধারে   

By admin

March 26, 2022

কলকাতা থেকে কম বেশি আড়াইশো কিলোমিটা দূরের একটি গ্রামে যে নির্মম ঘটনা ঘটে গেল তা কি সত্যিই বঙ্গ বুদ্ধিজীবীদের মনে কোনও আঁচড় কাটলো না। তা হলে তাঁরা কেন সেই ঘটনার নিন্দা করলেন না। বরং পুরো বিষয়টিকে তাঁরা সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন। রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথা কারও মুখে শোনা গেল না। কেউই কোনও ভাবে রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের সমালোচনা করলেন না। কিন্তু কেন? বঙ্গ বুদ্ধিজীবীরা নিশ্চয় সরকার বা শাসক দলকে চটাতে চাইছেন না। নিরাপদ সুখী গৃহকোণে নিশ্চিন্ত দিনযাপনে কোনও আশঙ্কার ছায়া ফেলতে চাইছেন না। তাই তালা বন্ধ ঘরে বাইরে থেকে ছুঁড়ে দেওয়া পেট্রলের দাউ দাউ আগুনে শিশু, নারীরাও যখন দমবন্ধ হয়ে পুড়ে খাক হয়ে যায় তখনও বঙ্গ বুদ্ধিজীবীদের বোধ উদ্বেগহীন, আশঙ্কাহীন, নিরুত্তাপবিহীন, তখনও তাদের চেতনা বরফের চেয়েও ঠান্ডা মেরে যায়।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কারা এই বুদ্ধিজীবী? শুধু কি বুদ্ধিকে উপজীব্য করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরাই বুদ্ধিজীবী? সাধারণ ভাবে তা বলা হলেও মনে হয় বিষয়টা এত সরল নয়। তাহলে? আদর্শগত ভাবে তাঁদেরই বুদ্ধিজীবী বলে ভাবা হয়, যারা সমাজ নিয়ে গভীর চিন্তা করেন৷ সমসাময়িক ঘটনাবলীকে মন ও মনন সহকারে বিশ্লেষণ ও গবেষণা করেন। আর তাঁদের সেই বিশেষ চিন্তা ভাবনা সমাজকে প্রভাবিত করে৷ বুদ্ধিজীবীরা কেবল সমাজ ও রাজনীতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে স্বাধীনভাবে নিজেদের চেতনা অনুযায়ী মতামত দিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না, সমাজ ও রাজনীতি সম্পৃক্ত সময়ের নৈতিক চেতনাকে বিনির্মাণ করেন৷ সে কারণে বুদ্ধিজীবীরা অবশ্যই মানবিক, গণতান্ত্রিক, মুক্তমনা এবং সমাজ ও মানুষের মঙ্গলকামী৷ তিনি অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, কথা বলেন মানুষের পক্ষে, থাকেন শান্তি, ন্যায়, কল্যাণ ও সত্যের সঙ্গে৷

এডওয়ার্ড সাঈদের মতে বুদ্ধিজীবী এমন একজন যিনি জনগণের সামনে স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচারের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট বার্তা, একটি দৃষ্টিভঙ্গী ও একটি সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেন৷ সত্য প্রকাশ করতে কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাকে বিচ্যুত করতে পারে না৷ অন্যদিকে নোয়াম চমস্কি বুদ্ধিজীবির দায়বদ্ধতা প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে বলেন, বুদ্ধিজীবীর দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকারের মিথ্যাগুলিকে জনগণের সামনে উন্মোচন করা৷ বুদ্ধিজীবীর যুক্তিযুক্ত চিন্তা রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কাজের চুল চেরা বিশ্লেষণ করে এবং তা নিয়ে জনগণের পক্ষে থেকে জনগণের সামনে প্রকাশ করে৷ বুদ্ধিজীবী যে কোনও পেশারই হতে পারেন৷ তবে বুদ্ধিজীবী কোনও উপাধিও নয়, এমনকি কোনও পেশাও নয়, আবার স্বভাবজাত বিষয়ও নয়। একজন মানুষ মননে, চিন্তায় এবং চর্চার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবী হয়ে ওঠেন৷  

কিন্তু আমরা কাদের বুদ্ধিজীবী বলে ভাবছি? যাঁরা মুখ খুলেছেন কিম্বা খোলেন নি, যারা মাথা নীচু করে থাকলেন কিন্তু ধিক বললেন না, যারা ভীষণ ব্যস্ত পরে ফোন ধরলেন না, যারা অস্ফুট গণহত্যা বললেও রাজনৈতিক হত্যা বলে মনে করছেন না, আবার গা হিম করা ঘটনা বললেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটা শব্দও উচ্চারণ করছেন না, কিম্বা যারা বুদ্ধিজীবীদের নীরব থাকা নিয়ে বেশ সরব অথবা যারা ভাতাজীবী, প্রিপেড বুদ্ধিজীবী বা বুদ্ধিজীবীদের লিডারকে কাক-শিল্পী বলছেন, কিম্বা ক্যাপশন লিখছেন- বাংলার বুদ্ধিজীবীরা চোখে কন্ডোম বেঁধে ল্যাংটা হয়ে ঘুমোচ্ছে ইত্যাদি প্রভৃতি তাদেরকে ভাবছি? অনেকের আফসোস বাম আমলে যে বুদ্ধিজীবীদের বার বার রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে, তাঁরাও মৌনব্রত নিলেন।