কলকাতা ব্যুরো: যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ আগুন। ঝলসে পুড়ে মৃত্যু হলো কমপক্ষে ৪০ জনের। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ঝালকাঠিতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এক যাত্রীবাহী লঞ্চে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। প্রাণে বাঁচতে একের পর এক মানুষ ঝাঁপ দিতে থাকেন সুগন্ধী নদীতে। ‘এমভি-অভিযান ১০’ নামে তিনতলা ওই লঞ্চে প্রায় এক হাজার যাত্রী ছিল।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই লঞ্চ ঝালকাঠির গাবখানের কাছে সুগন্ধী নদীতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আচমকাই দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে লঞ্চটি। মাঝ নদীতে এমন বিপদে কেউ কেউ দিশেহারা হয়ে নদীতেই ঝাঁপ দেন। কেউ কেউ আবার মৃত্যুর চোখ চোখ রেখে থেকে যান লঞ্চেই। ধানসিঁড়ির দিয়াকূল এলাকায় নদীর ধারে লঞ্চটি দাঁড় করানো হয়। তবে ততক্ষণে বড় বিপদ ঘটে গিয়েছে। লঞ্চটি একেবারে পুড়ে যায়। সেখান থেকেই একের পর এক দেহ বের করে আনা হয়। এখনও অবধি যা খবর, কমপক্ষে ৭০ জনকে গুরুতর অবস্থায় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী বলেন, লঞ্চের ডেক থেকে হঠাৎই বিকট শব্দ কানে আসে। ঘাড় তুলে দেখেন লঞ্চের পিছন দিক থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। মুহূর্তে সেই ধোঁয়া হয়ে যায় লেলিহান আগুনের শিখা। ধেয়ে আসতে থাকে যাত্রীদের দিকে। গোটা লঞ্চ আগুনে ঘিরে ধরে। প্রাণে বাঁচার ব্যাকুল আর্তিতে মাঝ নদীতেই ঝাঁপ দেন বহু মানুষ।

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁদের হাসপাতালে বার্ন ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এদিকে যাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁদের অধিকাংশ মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছেন। ৬৭ জনকে সার্জারি ইউনিটে রাখা সম্ভব হলেও বাকিদের স্থানান্তরিত করতে হয় ঢাকায়।

তবে কীভাবে এই আগুন লাগল তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ধন্দে পুলিশ। কারও কারও অভিযোগ, লঞ্চটিতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সে কারণেই এই বিপদ। দমকল বিভাগের কর্মীরা জানান, খবর পাওয়ার পর দ্রুত তারা ইঞ্জিন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। ১৫টি দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় দু’ ঘণ্টার চেষ্টা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। দমকল কর্মীদের সঙ্গে উদ্ধার কাজে নামেন কোস্ট গার্ড ও পুলিশ।

দমকলের প্রাথমিক অনুমান, লঞ্চের ইঞ্জিনরুমে কোনওভাবে আগুন লেগে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, লঞ্চের এক কর্মী তাঁর মালিককে জানান, প্রথমে দোতলায় আগুন দেখা যায়। এরপর ক্রমে তা গোটা লঞ্চকে গ্রাস করে ফেলে। তৃতীয় তলার কেবিন ও নীচেও আগুন ধরে যায়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version