কলকাতা ব্যুরো: দীর্ঘ ২০ মাস অপেক্ষার অবসান। মঙ্গলবার থেকে খুলে গেলো রাজ্যের সব স্কুলের দরজা। সকাল সকাল স্কুলমুখী পড়ুয়ারা। ফের একবার স্কুলগুলির ভিতর থেকে শোনা যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের কোলাহল। দীর্ঘ সময় ধরে খাঁ খাঁ করতে থাকা ক্লাসরুমগুলি পড়ার আওয়াজে আবারও গমগম করতে শুরু করলো। আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হলো। নবম ও একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে। অপরদিকে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হয় সকাল ১১টায়। তবে প্রতিদিনই ক্লাস শুরুর আধ ঘণ্টা আগে সব স্কুলে হাজির হতে হবে সব পড়ুয়াদের।  

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো মঙ্গলবার থেকেই খুলে গেলো রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা। সব করমের করোনাবিধি মেনেই খোলা হলো রাজ্যের স্কুলগুলি। এদিন সকাল হতেই দেখা গেলো সেই ছবি। স্কুলে ঢোকার আগে থার্মাল গান দিয়ে পড়ুয়াদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া, বার বার হাত স্যানিটাইজ করার নির্দেশও জারি করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বেশ কিছু স্কুলে একটি ক্লাসের পড়ুয়াদের দুই বা তিন ভাবে ভাগ করা হয়। ক্লাস চলাকালীন সব সময় মাস্ক পড়ে থাকতে হবে পড়ুয়াদের। বেশ কিছু স্কুলে অফলাইন ও অনলাইন দুই মাধ্যমেই চালু রয়েছে ক্লাস। অফলাইনের মাধ্যমে একদিকে যেমন স্কুলে বসেই ক্লাস করছেন একটি ক্লাসের বেশ কিছু পড়ুয়া, তেমনই অন্যদিকে বাকি পড়ুয়ারা অনলাইনের মাধ্যমেও একই সময়ে ক্লাস করছেন। এমনই চিত্র ধরা পড়েছে শহর কলকাতার বেশ কিছু স্কুলে।

ডিপিএস রুবি পার্ক স্কুলের সামনে আবার দেখা গেলো অতি পরিচিত সেই দৃশ্য। সাদা প্যান্ট ও সাদা জামা পরা ছেলেরা দাঁড়িয়ে রয়েছে পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে। আজ থেকে এই স্কুলে শুরু হলো শুধুমাত্র নবম ও একাদশ শ্রেণীর ক্লাস। তবে আগের মতো স্কুলে ঢুকেই সোজা গিয়ে ক্লাসে বসে পড়া যাবে না। কিছুটা হলেও বদলেছে এই নিয়ম। লাইন দিয়ে ঢুকতে হবে স্কুলে। সবাইকে জল,সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার পরে কোন কক্ষে বসতে হবে সেটি দেখে নিতে হবে।

তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য স্কুলের করিডোরে ও ক্লাসরুমে ইতিমধ্যেই মার্কিং শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও, ভিড় এড়াতে, নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের একটি গেট এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অন্য একটি গেট দিয়ে ঢোকা ও বেরোনোর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়াও, রয়েছে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থাও। পড়ুয়া ও শিক্ষকরা স্কুলে ঢোকা বা বেরোনোর আগে যাতে তাঁদের হাত স্যানিটাইজ করতে পারেন, তার জন্য স্কুলের গেটে একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেশিনও বসানো হয়েছে। এছাড়াও, সরকারি নির্দেশ মতো, প্রতিনিয়ত স্যানিটাইজ করা হবে স্কুল বিল্ডিংগুলি।

প্রশাসনের তরফে যে সমস্ত বিধি পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলি যথাযথ ভাবে পালন করার ছবি উঠে এলো যাদবপুর বিদ্যাপীঠ স্কুলে। এদিন পড়ুয়ারা স্কুলে ঢোকার সময় যেমন পরীক্ষা করা হয় শরীরের তাপমাত্রা ঠিক তেমনই প্রত্যেকের মুখে দেখা গেলো মাস্ক।

সরকারি স্কুলের পাশাপাশি রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির দরজাও মঙ্গলবার থেকে খুলে গেল। তবে, অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলেই পড়াশোনা জারি রয়েছে হাইব্রিড মোডে। পড়ুয়াদের ভাগাভাগি করে আনা হচ্ছে স্কুলে। একদিন ক্লাসে বসে এবং অন্যদিন বাড়িতে বসে ক্লাস করবে একদল পড়ুয়া। যারা প্রথম দিন বাড়িতে বসে ক্লাস করবে, তারা দ্বিতীয় দিন স্কুলে আসবে। পড়ুয়াদের স্কুলে নিয়ে আসা ও বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্কুল বাস চালু করতে চলেছে বেশ কিছু স্কুল। স্যানিটাইজ করা হয়েছে সেই সকল স্কুলবাসগুলি।

তবে মঙ্গলবার স্কুল খুলে যাওয়ায় খুশি ছাত্রছাত্রীরা। কলকাতার বেশিরভাগ স্কুলেই এদিন করোনাবিধি যথাযথভাবে পালন করতে দেখা যায়। মেনে চলতে দেখা যায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জারি করা গাইডলাইনসও। আর এতদিন পর স্কুলে আসতে পেরে খুশি পড়ুয়ারা। ভয় থাকলেও এতদিন পর স্কুল খোলায় খুশি অভিভাবকরা। তবে শহর কলকাতা বাদ দিলে রাজ্যের ছবিটা একটু হলেও আলাদা বলা চলে। সে জনসচেতনতাই হোক বা উদাসীনতার অভাব বেশিরভাগ স্কুলে সামাজিক দূরত্ব বা মাস্কের ব্যবহার; সবকিছুতেই গাফিলতির ছবি উঠে আসছে। সে শিক্ষক হোক বা পড়ুয়া কেউই ঠিকমতো মানছে না নিয়ম। তবে প্রথম দিনের নিরিখে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাত স্যানিটাইজ করা বা স্কুলে ঢোকার আগে থার্মাল চেকিং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসরুমে বসা, দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলা ইত্যাদি বিধিনিষেধ কতদিন ঠিকমতো পালন করা যায় সেটাই দেখার। পালন করলে ‘আপকা ভালা, সবকা ভালাই’।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version