কলকাতা ব্যুরো: ফের বিস্ফোরক তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। কলকাতায় কেকে’র অনুষ্ঠানে খরচ হওয়া অর্থের উৎস নিয়ে এবার সরাসরি প্রশ্ন তুললেন তিনি। তাঁর অভিযাগ, এত টাকা খরচ করে অনুষ্ঠান করতে হলে প্রোমোটার বা স্থানীয় মস্তানদের কাছে মাথা নত করতে হয়। প্রশ্ন তুলেছেন কলেজ ছাত্র সংগঠনের নৈতিকতা নিয়েও। স্বাভাবিকভাবেই শাসকদলের সাংসদের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে বিরোধী নেতৃত্ব। তবে শাসক দলের তরফে আরও এক সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, ফেস্টের টাকা আসে কলেজ এবং ছাত্র সংঘটনের যৌথ ফান্ড থেকে। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করার প্রয়োজন নেই।
সম্প্রতি ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ উপলক্ষে কোনওরকম চাঁদা তোলা যাবে না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে দল যে কড়া অবস্থান নেবে, তার ইঙ্গিত দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও জানিয়ে দেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে দল থেকে বহিষ্কার করাও হতে পারে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে আয়োজিত দলীয় সভায় তিনি একথা জানান।
গত ৩১ মে কলকাতার গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের ফেস্টে গান গাইতে এসেছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় শিল্পী কৃষ্ণকুমার ওরফে কেকে। অনুষ্ঠান শেষে হোটেল ফেরার পরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। শিল্পীর মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে অনুষ্ঠানের অব্যবস্থা নিয়েও।
তবে সব ছাপিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, মুম্বইয়ের জনপ্রিয় শিল্পীকে কলকাতায় আনতে খরচ অন্তত ১৫-২০ লক্ষ টাকা। গোটা অনুষ্ঠান আয়োজনে নাকি প্রায় ৫০ লক্ষ চাকা খরচ। কলেজের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কাছে এত টাকা কোথা থেকে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। এবার সেই একই প্রশ্ন শোনা গেল শাসকদলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের গলাতেও।
উল্লেখ্য, কেকের অনুষ্ঠানের খরচ পুরোটাই কলেজ কর্তৃপক্ষ দিয়েছিল বলে দাবি করেছিল টিএমসিপি। শনিবার বরাহনগরের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন দমদমের সাংসদ। সেখানে বক্তব্য রাখার সময় কেকে-র মৃত্যুর প্রসঙ্গে টেনে আনেন তিনি।
সৌগতবাবু বলেন, কেকে গান গাইতে এসে মারা গেলেন। শুনলাম, অনুষ্ঠান আয়োজনে ৩০ লক্ষ না ৫০ লক্ষ কত যেন লেগেছে। আমি শুধু ভাবি এত টাকা এল কোথা থেকে! টাকা তো আর হাওয়ায় আসে না। শুধু তাই নয়, সাংসদ আরও বলেন, এত টাকা খরচ করে বম্বের শিল্পী আনার কি খুব দরকার ছিল? এত টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান করতে হলে তো কারোর না কারোর কাছে সারেন্ডার করতে হয়। হয় প্রোমোটার না হয় এলাকার মস্তান। আর জীবনের প্রথমেই যদি সারেন্ডার কর, তাহলে বাকি জীবন কী করবে? তাঁর এই মন্তব্যে অস্বস্তি বেড়েছে শাসকদলের।
তবে ইতিমধ্যে তৃণমূল সাংসদের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের খোঁচা, শিক্ষিত মানুষ তো। সবটা বুঝতে পারছেন। এমন মন্তব্য করে বিপদে পড়ছেন নিজের দলেই। এই তো চলছে রাজ্যে। শুধু নাচ-গান ফূর্তি। শিক্ষা নেই, চাকরি নেই।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, “সৌগতবাবু যা বলেছেন একদম ঠিক কথা।”
তবে বিরোধী নেতাদের পালটা দিয়েছেন তৃণমূলের আরেক সাংসদ শান্তনু সেন। তিনি বলেন, যারা কলেজে পড়েছেন তাঁরা জানেন এধরনের অনুষ্ঠান করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সময়ই একটা টাকা নেওয়া হয়। আর গত ২-৩ বছর অনুষ্ঠান হয়নি। ফলে কলেজের ফান্ডে টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়েই অনুষ্ঠান হয়েছে। এনিয়ে অযথা বিতর্ক করে লাভ নেই।
1 Comment
Pingback: কেকে-কে শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ উদ্যোগ কবিরাজ বাগানের