কলকাতা ব্যুরো: অবশেষে সমস্ত আশঙ্কা সত্যি করে লেগে গেলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। মস্কোর ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়লো কিয়েভে। পাল্টা আঘাত হেনেছে ইউক্রেনও। রুশ বিমান ও হেলিকপ্টারকে গুলি করে নামাতে দেখা গিয়েছে তাদের। সব মিলিয়ে চাঞ্চল্য বেড়েই চলেছে। ইউক্রেনের পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার হামলায় অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। পোডিলস্কে সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে রুশ সেনা। নিখোঁজ বহু মানুষ। শহর জুড়ে বাজছে সাইরেন।
তবে জানা যাচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে ভারতের সাহায্য চাইলো ইউক্রেন। ইউক্রেনের তরফে জানানো হয়েছে, সংঘাত থামাতে ভারতের সাহায্য় দরকার। মস্কোর উপর প্রভাব খাটাক ভারত। ইউক্রেনের মতে, যুদ্ধ বন্ধে ভারত বড় ভূমিকা নিতে পারে।
ইতিমধ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। যদি এখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনার চেষ্টা করা হয়, তাহলে অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হতে পারে। এমনটাই বলা হয়েছে ভারতের তরফে। ভারতের আরও দাবি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সামরিক সংঘাত বাড়লে ধাক্কা খাবে শান্তি ও নিরাপত্তা। রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস ত্রিমূর্তি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বড়সড় সঙ্কট তৈরি করতে চলেছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পরিস্থিতি।
কিন্তু কেন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলো রাশিয়ার? আসুন কিছু বিষয়ের উপর নজর রাখা যাক-
গত কয়েক বছর ধরেই পূর্ব ইউক্রেনে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে। পরিস্থিতি সবচেয়ে গুরুতর হয়ে ওঠে ২০১৪ সালের পর থেকে। সেবার নির্বাচনে ইউক্রেনের নাগরিকরা রুশপন্থী এক নেতাকে দেশের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরিয়ে দেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ব্যাপারটা একেবারেই ভালভাবে নেয়নি রাশিয়া। ক্রিমিয়া দখল করে মস্কো। বলা যায়, তখন থেকেই ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে।
গত কয়েক বছর ধরে ক্রমেই বেড়েছে দুই দেশের সম্পর্কের উত্তাপ। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন। কিন্তু পুতিনও পালটা জবাব দিয়েছিলেন। গত সোমবারই ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তখন থেকেই যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছিল। অবশেষে সব আশঙ্কা সত্যি করে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের উপরে হামলা চালালো রাশিয়া।
রাশিয়া বরাবরই স্ট্র্যাটেজি ডেপথ-কে কাজে লাগিয়ে শত্রুবাহিনীকে বেকায়দায় ফেলেছে। ভৌগলিক দিক থেকে শত্রুদের কাছে রাশিয়া বরাবরই কঠিন। দেশটাও বিরাট বড়। প্রতিপক্ষ যদি কোনও ভাবে রাশিয়ায় ঢুকেও পড়ে সেক্ষেত্রে শস্যে আগুন লাগিয়ে ক্রমে পিছিয়ে যেতে থাকে লালফৌজ। প্রতিরক্ষার কৌশলগত কারণেই ইউক্রেন দখল করে পূর্ব ইউরোপ ও নিজেদের মধ্যে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর সেই কারণেই যেনতেন প্রকারে ইউক্রেনকে দখলে রাখতে চায় রাশিয়া।
রাশিয়ার উপরে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আমেরিকা। কিন্তু রাশিয়া তাদের ‘রণং দেহি’ হাবভাব বদলানোর কোনও চেষ্টাই করেনি। উলটে নতুন করে মদত জুগিয়ে গিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। সেই বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যই ছিল পূর্ব ইউক্রেনকে দখল করে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা। যা দেখে অসন্তোষ বাড়তে ইউক্রেন সরকারের। এরপরই তারা দ্বারস্থ হয় ন্যাটোর। আর এখান থেকেই ব্যাপারটা এক অন্য দিকে বাঁক নেয়।
তবে যত বেশি ন্যাটোর সঙ্গে আলোচনা এগিয়েছে ইউক্রেনের, ততই ক্ষোভ বেড়েছে রাশিয়ার। গত কয়েক বছরে ইউক্রেনের সেনা ও রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর ততই স্পষ্ট হয়েছে যুদ্ধের আশঙ্কা।