কলকাতা ব্যুরো: সদ্য প্রয়াত সংগীত শিল্পী কেকে’কে নিয়ে বিতর্কের মাঝে অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন রূপঙ্কর বাগচী। শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে হাতজোড় করে ভুল স্বীকার করলেন সংগীত শিল্পী। প্রয়াত কেকে’র পরিবারের কাছে চাইলেন ক্ষমাও। পাশাপাশি বিতর্কিত ওই ভিডিওটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত শিল্পী।
গত সোমবার রাতে কেকে’কে নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচি। ঠিক তার পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে। শেষ পর্যন্ত হৃদরোগে মৃত্যু হয় তাঁর। রূপঙ্করের বিতর্কিত মন্তব্যের পরই শিল্পীর প্রাণহানির ঘটনায় ফুঁসতে থাকেন অনুরাগীরা। সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে সর্বত্র। কার্যত কোণঠাসা হয়ে যান রূপঙ্কর। তাঁর স্ত্রী প্রাণনাশের হুমকি ফোন পান বলেও অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতেই শুক্রবার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রূপঙ্কর। সেদিনের ভিডিওটির জন্য ক্ষমাপ্রকাশ করেন সংগীতশিল্পী। সমালোচনার জেরে তাঁর মানসিক অবস্থা ঠিক কীরকম, তার ব্যাখ্যা দেন রূপঙ্কর। শিল্পীর কথায়, আমার সংগীত জীবনে এইরকম বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। ওড়িশায় বসে করা ভিডিও পোস্ট এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যা আমার গোটা পরিবারকে চরম দুর্ভাবনা এবং মানসিক নিপীড়নের মধ্যে ঠেলে দেবে। মুহূর্তের অসতর্কতা যে এমন গনগনে এবং মারমুখী আবেগ বয়ে আনবে কে জানত? শুধুমাত্র বুঝিয়ে না বলতে পারার ফলেই এত সমালোচনা, কাটাছেঁড়া বলেই মনে করছেন রূপঙ্কর।
তবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কেকে’র পরিবারের কাছে নিঃস্বার্থ ক্ষমাও চেয়ে নেন সঙ্গীতশিল্পী। প্রয়াত সংগীত শিল্পী কেকে’র প্রতি তাঁর কোনও বিদ্বেষ নেই বলেই জানান রূপঙ্কর। তিনি বলেন, আমার কেকে সম্পর্কে ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই। থাকার প্রশ্নও ওঠে না। আমি শুধু ওঁর কনসার্ট নিয়ে তৈরি হওয়া উন্মাদনা লক্ষ্য করে বলতে চেয়েছিলাম বাঙালি গায়কদের জন্য আপনারা একইরকম দরদ দেখান। ব্যক্তিগতভাবে গায়ক হিসাবে আমার কোনও হতাশা নেই। একজন প্রথিতযশা শিল্পী কলকাতার মঞ্চে গাইতে এসে যেভাবে প্রাণ হারালেন সেটা খুব হৃদয় বিদারক।
রূপঙ্কর এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উল্লেখ করেন দক্ষিণ ভারত বা পশ্চিম ভারত যে ভাবে শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আমরা তা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। আমরা অস্ত্বিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে। আমি একার কথা নয়, সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছি। আমি কিছু সহযোদ্ধার নাম করেছিলাম। পরে মনদক্ষিণ ভারত বা পশ্চিম ভারত যে ভাবে শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আমরা তা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। আমরা অস্ত্বিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে। আমি একার কথা নয়, সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছি। আমি কিছু সহযোদ্ধার নাম করেছিলাম। পরে মনে হয়েছে, নামগুলি বলার আগে তাঁদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল।
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে নজরুলমঞ্চে কে কে-র কনসার্ট নিয়ে রূপঙ্কর যে ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন তাতে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, কে এই কে কে? তাঁকে নিয়ে কেন এত উন্মাদনা? ঘটনাচক্রে সেদিনই অনুষ্ঠান চলতে চলতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কে কে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তারপরেই রূপঙ্করের বিতর্কিত পোস্ট নিয়ে গোটা দেশে ব্যাপক আলোড়ন পড়ে।