কলকাতা ব্যুরো: প্রায় আড়াই দশক আগে শুমারিতে ৩৩ টি বাঘ আছে বলে জানা গিয়েছিল। আর ২০০০ সাল নাগাদ গণনাতে জানা যায় বক্সা জঙ্গল বাঘহীন। এমন সমীক্ষার খবরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুনরায় বাঘ গণনার নির্দেশ দেন। যদিও তারপরে বক্সার জঙ্গলে আর বাঘের দেখা পাওয়া যায়নি। তিন দশকের সেই খরা এবার কাটল কিনা সেই জল্পনা বাড়িয়ে দিলো শুক্রবার গভীর রাতের জঙ্গলে বসানো ট্রাপ ক্যামেরার ছবি। রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী যাওয়ার পথে জঙ্গলের ধারে একটি বাঘ ক্যামেরাবন্দি হয়েছে শুক্রবার গভীর রাতে। আর তাতেই খুশির হাওয়া উত্তরবঙ্গের বনদপ্তরের কর্তা থেকে কর্মীদের মধ্যে।

বক্সার জঙ্গলে ফের দেখা পাওয়া গিয়েছে একটি বাঘের। ক্যামেরায় পাওয়া ছবি দেখে বনকর্তারা নিশ্চিত, এটি একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ফলে এতদিন ধরে বক্সায় বাঘ নেই বলে যে হা-হুতাশ ছিল, তা এবার কাটবে কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন। বনদপ্তরের কর্তাদের একাংশের ধারণা, একটি বাঘিনী আশপাশের এলাকায় থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আর বক্সার জঙ্গল সাধারণ পর্যটকদের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। যদিও বক্সায় যদি সত্যি আবার বাঘ দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে পর্যটক যে বাড়বে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশার আলো দেখছেন এখানে নানা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বাসিন্দারা। বনদপ্তরের কর্তারা তাই রাজাভাতখাওয়া-বক্সা আর জয়ন্তীর মত এই এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের ঘোরাফেরার ক্ষেত্রে নতুন বিধি তৈরীর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন।

একসময় বক্সায় প্রচুর বাঘ ছিল। তবে কোনওদিনই খুব বেশি বাঘ এখানে দেখা যায়নি। কোনওদিন এখানে বাঘ মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে, এমনও শোনা যায়নি। আবার বহু মানুষ একসঙ্গে বাঘ দেখেছেন, তারও ইতিহাস নেই। নেই সুন্দরবনের মতো বাঘের উপর মানুষের হামলা বা চোরাশিকারের ইতিহাস। অথচ একটা সময় বক্সা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে বাঘ। সে ক্ষেত্রে জঙ্গল কেটে ফেলা এবং ডলোমাইট তুলতে গিয়ে এখানে জঙ্গলের ক্ষতি বন্যপ্রাণীদের আস্তানা উচ্ছেদের বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে অভিযোগ বন বস্তির বাসিন্দাদের।

প্রচুর মানুষ বা কেউ দেখেছেন এমনটা না হলেও, কিন্তু মাঝেমাঝেই বাঘের মুখোমুখি হতে হয়েছে মানুষকে। জঙ্গল এলাকার বাসিন্দা থেকে পর্যটকদের সামনেও এসেছে বাঘ। এমনকি বনদপ্তরের এক কর্তা ২০১৩ সালে বাঘের দেখা পেয়েছেন বলে দাবি করেন। যদিও বক্সায় বাঘ নেই বলে ২০০০ সাল নাগাদ ঘোষণা করা হয়।

পরবর্তীতে বক্সায় বনসৃজনে জোর দেওয়া হয়। বাঘ আছে কিনা তা ঠাওর করতে সুন্দরবন থেকে দফায় দফায় প্রচুর হরিণ নিয়ে গিয়ে ছাড়া হয় বক্সার জঙ্গলে। অসম থেকে আনা হয় ঘাস। এমনকি বাঘের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতেও বহু কর্তা কোমর বেঁধে নামেন। তবে এতদিনে একটি বাঘের দেখা পাওয়ায়, তারা আশাবাদী আগামী দিনে বাঘ দেখতে পর্যটকরা এলে নিরাশ হবেন না।