কলকাতা ব্যুরো: দুই ভাই বোনের দেহ আগলে বসে রয়েছেন দিদি। ফিপ্রায় ১৫ দিন ধরে।বুধবার বিকেলে হঠাৎ এলাকার লোকজন ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে খবর দেয় পুলিশকে। বেলুড় থানার পুলিশ এসে ডাকাডাকি করলেও কেউ দরজা না খোলায় তালা ভেঙে, কলাপসিবল গেট খুলে, ঘরে ঢুকে দেখে দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মরে পড়ে রয়েছেন।তাদের দেহ আগলে খাটে শুয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা। বেলুড়ের ওই বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী মনোরঞ্জন সেনকে চিনতেন এলাকার বাসিন্দারা। তিনি তার দুই বোনকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। দিন ১৫ আগে একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন মনোরঞ্জন বাবু। কিন্তু রাস্তায় এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশ তাকে নিয়ে এসে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যায়। তারপর থেকে তাদের আর কেউ বাইরে দেখতে পায়নি।এদিন সকাল থেকেই প্রতিবেশীরা ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পেতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গন্ধ বাড়তে থাকায় খবর দেওয়া হয় পুলিশে। বিকেলের পর পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। রত্ন সেন ও মনোরঞ্জন সেনের দেহ ঘরে নিয়েই নিজে বিছানায় শুয়ে ছিলেন বৃদ্ধা অমৃতা সেন।প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতা এবং অনাহারে মৃত্যু হয়েছে ভাই বোনের। অনেকেই এই ঘটনার সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটের রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনার তুলনা করছেন। কিন্তু প্রতিবেশীদের একাংশ সে কথা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, রবিনসন স্ট্রিটের যে ব্যক্তি দে হ আগলে বসেছিলেন, তিনি সুস্থ ও সবল। কিন্তু মানসিকভাবে হয়তো ভারসাম্য হারিয়ে ছিলেন। কিন্তু এরা তিনজনেই এতটাই বয়স্ক এবং অসুস্থ, যে এদের দেখভালের প্রয়োজন ছিল।প্রশ্ন উঠছে, ১৫ দিন আগে পুলিশ এসে এই বৃদ্ধকে যখন বাড়িতে পৌঁছে দিলো, তার পরেও কেন আর একবারও পুলিশ তাদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করল না। যদিও এখানে প্রশ্ন উঠছে প্রতিবেশীদের ভূমিকা নিয়েও। প্রতিবেশীরা এতদিন ধরে পরিবারটিকে চেনেন। অথচ তারাই বা কেন গত ১৫ দিনে কেউ এদের একবারও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করল না সে প্রশ্ন উঠছেই।পুলিশ মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। কিন্তু অসুস্থ বৃদ্ধা অমৃতা সেন এর থেকে এখনও তেমন কিছু জানতে পারেনি পুলিশ।’ প্রতিবেশীরা বলছেন, তারা ওই ঘরে ঢোকার পর মৃতদেহগুলি বের করা হলেও, বৃদ্ধা অমৃতা সেন সেনের ভাবলেশহীন মুখে তেমন কিছু বোঝার উপায় ছিল না। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বিছানার উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়েন। এখন তাকে চিকিৎসা করিয়ে তারপরে কথা বলার জন্য ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে পুলিশ।