কলকাতা ব্যুরো: একটানা বৃষ্টি ও ঝাড়খণ্ডের জলোচ্ছাসে মাইথন, পাঞ্চেত, ডিভিসি থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে। অবস্থা সামাল দিতে চার জেলায় সেনা বাহিনীকে উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে। একইসঙ্গে জেলাগুলি থেকে কমপক্ষে তিন লক্ষ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরানো হয়েছে। দুই বর্ধমান, হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় বানভাসি কয়েক লক্ষ মানুষ। সেচ দপ্তরের কর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি ১৯৭৮ সালের বন্যার থেকেও ভয়ঙ্কর হওয়ার আশঙ্কা।
এরই মধ্যে ফের শুক্রবার দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে আরও দু লক্ষ কিউসেক জল ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হওয়ার আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছে প্রশাসন। জেলাগুলিতে বানভাসি অংশে একতলা বাড়ি সহ বহু এলাকাতেই জল ঢুকে গিয়েছে। বহু জায়গায় রাস্তার ওপর দিয়ে জল বয়ে চলায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। এরইমধ্যে শুক্রবার থেকে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ফলে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গেই উত্তরবঙ্গ পরিস্থিতি ঘোরালো হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্য সচিব দফায় দফায় বৈঠক করেন জেলাগুলির জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে। সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেছেন, বিভিন্ন জলাধার থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ জল ছাড়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।
গত দুদিনে প্রায় ৩০০ মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। একইসঙ্গে প্রবল বৃষ্টি চলছে ঝাড়খন্ডে। এই অবস্থায় ক্রমাগত জল ছাড়া হচ্ছে জলাধার গুলি থেকে। তার ফলে দুই বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার একাংশ, হাওড়া এবং হুগলিতে বানভাসি কয়েক লক্ষ মানুষ। নদী গুলিতে জল বাড়তে থাকায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, সাগর দ্বীপ, মৌসুনি, পাথরপ্রতিমা সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে ঝাড়খণ্ডের গালুডি ও তেনুঘাট থেকে জল প্রবল পরিমাণে মুকুটমণিপুরে ঢোকায় সেখানকার জলাধার ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এর ফলে দুই মেদিনীপুরের একটা বড় অংশ বন্যার কবলে। ঘাটালের সঙ্গেই পাঁশকুড়া, তমলুক, দাসপুরে বানভাসি হয়েছেন বহু মানুষ। পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া এবং মেদিনীপুরে সেনা নামানো হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক তা সামাল দেওয়ার জন্য কলকাতা থেকে সিনিয়র দুই সিনিয়র আই এ এস অফিসারকে বীরভূম এবং বর্ধমান এ পাঠানো হচ্ছে।
ডিভিসি জানিয়েছে, পাঞ্চেত ও মাইথন থেকে প্রায় এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। সেই জল যখন দুর্গাপুর ব্যারেজে পৌঁছোবে তখন আগে থেকে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে জমে থাকা জলের সঙ্গে মিলে দু লাখ ৫০ হাজার কিউশেকে দাঁড়াবে। পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের অতিবৃষ্টির ফলে আরো এক লক্ষ ৪০ হাজার কিউসেক জল নেমে আসবে। ফলে দুর্গাপুর ব্যারেজের চাপ বাড়াবে। এই চাপ সামাল দিতেই শুক্রবার অন্তত দু লক্ষ কিউসেক জল ছাড়তে হবে। তার ফলে গ্রামীণ হাওড়ার আমতা উদয়নারায়নপুর, হুগলির গ্রামীণ এলাকার পরিস্থিতি কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আধিকারিকরা।