বেশ কিছুদিন ধরেই ডলারের নিরিখে টাকার দাম হু হু করে পড়ছিল। এবার তা নামলো ৮০ টাকায়। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে টাকার দাম কখনো এতটা পড়েনি। তাই একে টাকার দামের রেকর্ড পতন বলা হচ্ছে। আর এই পতন হয় মঙ্গলবার সকালে। হিসেব অনুযায়ী এখনএক মার্কিন ডলারের মূল্য দাঁড়ালো ৮০.০১ পয়সা। যেখানে চলতি বছরের গোড়াতে এক মার্কিন ডলারের মূল্য ছিল ৭৪ টাকা। তারপর থেকে টাকার দাম পড়তে পড়তে ৮০ টাকায় এসে দাঁড়ালো।
জানা যাচ্ছে এই নিয়ে পর পর সাতবার টাকার দামে পতন ঘটলো। খোদ সংসদেই কেন্দ্র সরকারের তরফে জানানো হয়েছে ২০১৪-র ডিসেম্বর থেকে টাকার দাম ২৫ শতাংশ পড়েছে। তার মানে তখন থেকেই দেশের অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগা শুরু হয়েছিল। দেখতে গেলে কেন্দ্র সেকথা একভাবে নিজের মুখেই স্বীকার করে নিল। ২০১৪ সালে টাকার দাম ৬৩তে নেমে এসেছিল ডলারের তুলনায়। তার পরে আবার গত ১১ জুলাই টাকার দাম ৭৯ নেমে এসেছিল। এই নিয়ে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের। দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে মার্কিন ডলার আর টাকা আরও দূর্বল হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দামের এমন দশা মোদী জমানাতেই হল।

সোমবার লোকসভার বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন টাকার দামের পতন (Rupees Value) নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানান, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় মুদ্রার দর পড়েছে ২৫ শতাংশ। কারণ, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি বাজার থেকে পুঁজি তুলে নিয়েছে। অন্যদিকে, সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলছে। গ্লোবাল ওয়েল বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড বলছে, ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ০.৩৫ সেন্ট কমে হয়েছে ১০৫.৯০ মার্কিন ডলার। স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ক্যাপিটাল মার্কেটে ১৫৬.০৮ টাকার শেয়ার ক্রয় করেছে।
তাহলে কেন এই পতন? সীতারামনের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, বিদেশি সংস্থাগুলো নিজেদের পুঁজি তুলে নেওয়ার ফলে টাকার দাম কমছে। কিন্তু আসল ঘটনা হলো, শুধু টাকার দাম কমছে, তাই নয়, গত কয়েক মাসে ইউরোর মতো শক্তিশালী মুদ্রার দামও অনেকটাই কমেছে। এখন ইউরো ও মার্কিন ডলারের মূল্য প্রায় সমান হয়ে গিয়েছে। এছাড়া প্রায় সব দেশের মুদ্রাই কমবেশি পড়েছে।

অর্থনীতিদের একাংশের মতে, আমেরিকায় এই সময় মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ৯ শতাংশের বেশি। আমেরিকার অর্থনীতি বিশ্বের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তার বড় প্রভাব বিশ্বের ওপর পড়ছে। এর ফলে ভারতের শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলো তাদের অর্থ বের করে নিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব গোটা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর পড়ছে। ফলে টাকার দামও কমছে। তাদের আশঙ্কা, টাকার দাম আরও পরতে পারে। আমেরিকায় যদি আর্থিক মন্দা দেখা দেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে তার ভয়ংকর প্রভাব পড়তে বাধ্য। ভারতীয় অর্থনীতি করোনার ধাক্কা সামলে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই সামনে এল ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা। তার প্রভাব ভারতের ওপর তো পড়বেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক ডলার সমান ৮০ টাকা, এটা একটা বড় ধাক্কা ( Rupees Value )। তবে ভারতের অশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হবে। ভারতে যতটা অশোধিত তেল প্রয়োজন, তার ৮০ ভাগই বিদেশ থেকে আসে। যেহেতু টাকার দাম পড়ে গেছে, তাই এই তেল কিনতে ভারতের বেশি টাকা লাগবে। ভারতকে ভোজ্য তেলের একটা অংশ আমদানি করতে হয়। তাতে টাকা বেশি লাগবে। তার মানে সব ক্ষেত্রে আমদানির খরচ বেড়ে যাবে। সুবিধা হবে রপ্তানির ক্ষেত্রে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারত এখন রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অশোধিত তেল কিনছে। সেখানে তারা তেল পাচ্ছে বাজারের তুলনায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ দামে। তবে তারা মনে করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল সংস্থাগুলি যতটা রাশিয়ার তেল কিনছে, বেসরকারি সংস্থাগুলো কিনছে তার থেকে অনেক বেশি।এর ফলে শেয়ার বাজার আরও পরতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ডও পরবে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে আশার কথা হল, এই মুহূর্তে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় যথেষ্ট ভাল। তাছাড়া রিজার্ভ ব্যাংক টাকার পতন রুখতে ডলার বিক্রি করছে না। তারা বরং কাঠামোগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, রিজার্ভ ব্যাংক যেমন দেশের ব্যাংকগুলিকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা প্রবাসী ভারতীয়দের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়িয়ে দিতে পারবে। বাজপেয়ীর আমলে অর্থনীতির হাল সামাল দিতে প্রবাসী ভারতীয়দের অর্থ খুব কাজে এসেছিল। আর রাশিয়ার তেল কেনার সুবিধা হল, তা রুবল দিয়ে কেনা যাচ্ছে। অন্য দেশের সঙ্গেও ডলার বাদ দিয়ে তাদের দেশের মুদ্রায় আমদানি করার চেষ্টা করছে ভারত।
তবে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার আসার পর থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত সব ক্ষেত্রেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। যার মধ্যে অন্যতম হল ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য।কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সংসদে জানিয়েছে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আসার সময় এক ডলারে টাকার মূল্য ছিল ৬৩.৩৩। তা এই মুহূর্তে বেড়ে হয়েছে ৭৯.৪১ টাকা। অর্থাৎ ৮ বছরে ডলার প্রতি মূল্য কমেছে ১৬.০৮ টাকা। অর্থাৎ এক ডলারের সাপেক্ষে টাকার মূল্য কমেছে ২৫.৩৯ শতাংশ। কিন্তু কেন হল এমন? সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের দাম বাড়া সহ একাধিক বিষয় এর পিছনে রয়েছে। শুধু যে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে তাই নয়, পাউন্ড, ইয়েন, ইউরোর মূল্যও ডলারের তুলনায় কমেছে। কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতিতে যে বিপুল ধাক্কা আসতে চলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। টাকার দাম পড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। বড় ধাক্কা আসবে শেয়ার বাজারেও।
3 Comments
এদিকে, সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলছে। গ্লোবাল ওয়েল বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড বলছে, ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ০.৩৫ সেন্ট কমে হয়েছে ১০৫.৯০ মার্কিন ডলার। স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ক্যাপিটাল মার্কেটে ১৫৬.০৮ টাকার শেয়ার ক্রয় করেছে।
ভারতের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হবে অশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে। ভারতে যতটা অশোধিত তেল প্রয়োজন, তার ৮০ ভাগই বিদেশ থেকে আসে। যেহেতু টাকার দাম পড়ে গেছে, তাই এই তেল কিনতে ভারতের বেশি টাকা লাগবে।
এর ফলে শেয়ার বাজার আরও পরতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ডও পরবে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে আশার কথা হলো, এই মুহূর্তে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় যথেষ্ট ভালো। আর রিজার্ভ ব্যাংক এবার টাকার পতন রুখতে ডলার বিক্রি করছে না। তারা বরং কাঠামোগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।