দিব্যেণ্দু ভৌমিক
করোনা আবহে নতুন করে সেজে উঠছে রসিক বিল মিনি জু। বিরল প্রজাতির কচ্ছপরদের জন্য তৈরি হচ্ছে আস্তানা । ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনা কয়েকটি বিরল প্রজাতির কচ্ছপ আছে এখানে । দার্জিলিং জু থেকে এসেছে ৩টি ইন্ডিয়ান পাম ক্যাট ও ৩টি জাঙ্গল আউল । দ্রুত তৈরি করা হচ্ছে মিনি জুর আবাসিক বন্যপ্রাণীদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র। এতে থাকছে অপারেশন থিয়েটার , মেডিসিন রুম , ষ্টোর রুম ও ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা । রসিক বিল মিনি জুর সুপারভাইজার তথা বন দপ্তরের রেঞ্জ অফিসার সুরঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, খুব শিগগির বন্যপ্রাণীদের জন্য এই হাসপাতালটি কাজ শুরু করবে।

একবছর আগে খয়েরবাড়ির রেসকিউ সেন্টার থেকে আনা দুই তরুণী চিতাবাঘ রিমঝিম ও গরিমা নিজেদের বেশ মানিয়ে নিয়েছে রসিকবিল মিনি জু-তে। ওদের খাবার দেওয়ার দায়িত্বে আছেন মুস্তাক। তিনি জানিয়েছেন, দিনে আড়াই কেজি মাংস পেলেই ওরা খুশি থাকে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে মিনি চিড়িয়াখানাটিকেও। অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে । খুব শিগগির আসছে এক জোড়া ‘সি ব্যাট ক্যাট।’ আসবে দার্জিলিং থেকে। প্রচুর নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি তুফানগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের নাগুরুরহাটের এই বিলে আসত দীর্ঘদিন থেকে। একে ঘিরেই ১৯৯৩ সালে গড়ে ওঠে পঞ্চায়েত সমিতি ও বন বিভাগের উদ্যোগে ‘রসিকবিল প্রকৃতি পর্যবেক্ষন কেন্দ্র।’

২০০৬ সালে এটি উন্নীত হয় ‘ মিনি জু’ তে। এরপর আনা হয় চিতাবাঘ। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার বক্সিরহাটের কাছে অবস্থান বলে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পায় এই রসিকবিল। মনোরম পরিবেশ বলে শীতের মরশুমে ঢল নামতে শুরু করে পিকনিক পার্টির। তারস্বরে মাইক বাজিয়ে চলে ঝিলের ধারে পিকনিক। ফলে একসময় প্রায় বন্ধ হয়ে যায় পাখি আসা । হাজার পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে থাকতো যে বিল, তা ইতিহাস হয়ে যেতে বসে । একসময় নড়েচড়ে বসে বন দপ্তর । অবশেষ নিষিদ্ধ হয় বিলের ধারে পিকনিক। আগেই বন্ধ করা হয়েছিল প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার। ফলে খুশি হন পরিবেশ প্রেমীরা। ‘অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল। বনবিভাগের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ প্রেমী সংগঠন ন্যাস গ্রুপ-এর সম্পাদক অরূপ গুহ।

বর্তমানে রসিক বিলে আছে ২ চিতাবাঘ , এই ১১ টি ঘড়িয়াল , ৬২ টি চিতল হরিণ ছাড়াও অজগর, ময়ূর, সি প্যাট ব্যাট, গোল্ডেন ফ্রিজেন্ট ও সিলভার ফ্রিজেন্ট , হর্ণবিল সহ হরেক দেশি -বিদেশী পাখি। তাছাড়া চারটি পাখির খাঁচা থেকে সবসময় ভেসে আসে কিচিরমিচির । বিলের জলে শীতের শুরুতেই আসা শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির দল । ২০০৬ সালে গড়ে ওঠা ১৭৫ বর্গ কিমির রসিকবিল মিনি জু ছুটির দিনের ঠিকানা হয়ে উঠেছে আবার। লকডাউন পিরিয়ডে এখানে সবুজ বেড়েছে অনেক।
বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘রসিকবিল নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। আমরা ধীরে ধীরে গুছিয়ে তুলছি।’ তবে বিলের অপরিষ্কার জল, নিয়মিত কচুরিপানা পরিষ্কার না করা নিয়ে স্থানীয় মানুষদের ক্ষোভ আছে প্রচুর। ঠিকঠাক পরিবেশ ধরে রাখতে পারলে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশের মুখে এই রসিক বিল মিনি জু আরও দিশা দেখাতে পারে কোচবিহার জেলার পর্যটন বিকাশে।