কলকাতা ব্যুরো: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অধিকর্তাদের কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা তথা মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে বাতিল করার আবেদন জানিয়ে রিট পিটিশন দায়ের করেন।
গত ১৪ নভেম্বর কেন্দ্রের তরফে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। সেই অর্ডিন্যান্সে জানানো হয়, সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের প্রধানদের কার্যকালের মেয়াদ ২ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫ বছর করা হচ্ছে। দুই তদন্তকারী সংস্থার অধিকর্তাদের কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণার পরই বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, এতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে আরও হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবে সরকার, তাদের ইচ্ছামতোই পরিচালিত হবে তদন্ত।
বৃহস্পতিবার রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালার আইনজীবী অভিষেক জেবারাজের জমা দেওয়া আবেদনে বলা হয়, অসৎ পথে এভাবে তদন্তকারী সংস্থাগুলির শীর্ষকর্তাদের মেয়াদ বাড়ানোয় এটাই প্রমাণিত হয় যে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং এদের নিরপেক্ষ তদন্তেরও সরাসরি বিরোধিতা করছে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত বিচার প্রক্রিয়াকেও ব্যর্থ করার প্রচেষ্টা।
অন্যদিকে বুধবারই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট প্রধানদের মেয়াদ বাড়ানোর কেন্দ্রীয় অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র ৷ ইতিমধ্যেই এনিয়ে একটি পিটিশন ফাইল করেছেন তৃণমূল সাংসদ ৷
সাংসদের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই অধ্যাদেশগুলি সিবিআই এবং ইডির স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতাকে আক্রমণ করে ৷ পিটিশনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের জারি করা অধ্যাদেশগুলি সংবিধানের সমতা রক্ষার নীতি লঙ্ঘন করে ৷ পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায্য বিচারের নীতিও উলঙ্ঘিত হয় ৷
সিবিআই এবং ইডি’র প্রধানদের দুই বছরের মেয়াদ ছিল যা এখন পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। দুই বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার পর তাঁদের মেয়াদ এক বছর করে তিনবার বৃদ্ধি হতে পারে ৷ বুধবার ইডি ডিরেক্টর সঞ্জয় কুমার মিশ্রের অবসর নেওয়ার কথা ছিল ৷ গত বছরই তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা এক বছর বাড়ানো হয়েছিল । চলতি সপ্তাহের শুরুতে দুই তদন্তকারী সংস্থার প্রধানদের মেয়াদ বাড়ানো হয় ৷ দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট (১৯৪৬) এবং সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন অ্যাক্ট (২০০৩) অনুযায়ী এই মেয়াদ বৃদ্ধি সম্ভব নয় ৷ তাই আইন সংশোধনের জন্য ওই অধ্যাদেশ জারি করে কেন্দ্র ৷ মহুয়া তার বিরুদ্ধেই সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন ৷
বিনীত নারায়ণ বনাম কেন্দ্রীয় সরকার (১৯৯৮) মামলার উল্লেখ করে এই আবেদনটি দাখিল করা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। ওই মামলায় সিবিআইয়ের অধিকর্তার কার্যকালের মেয়াদ নির্দিষ্ট করার নিয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই সময় আদালতের তরফে জানানো হয়েছিল, ইডি কর্তার কার্যকালের মেয়াদবৃদ্ধি বিরল ও ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেই হতে পারে এবং তা খুব স্বল্প সময়ের জন্যই করতে হবে।
গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ওই দুই অর্ডিন্যান্সে সই করেন। নতুন অর্ডিন্যান্সে বলা হয়েছে, সিবিআই এবং ইডির প্রধানদের কার্যকালের দুই বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রতি বছর তাঁদের কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানো যাবে। সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত এই মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব। ইডির অধিকর্তা সঞ্জয় কুমার মিশ্রের মেয়াদ ১৭ নভেম্বর শেষ হচ্ছিল। ঠিক তার আগেই কেন্দ্রের তরফে এই নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়।
এর আগে গত বছরই কেন্দ্রের তরফে ২০১৮ সালে তার নিয়োগের নির্দেশিকা সংশোধন করা হয়, যার ফলে তার কার্যকালের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল।
কংগ্রেস নেতার আর্জিতে বলা হয়েছে, সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের প্রধানদের কার্যকলাপ যাতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বা পরিচালিত না হয়, তার জন্য আদিকারিকদের কার্যকালের মেয়াদে যে স্থিতিশীলতা আনা হয়েছিল, তা নষ্ট করছে এই অর্ডিন্যান্স। স্বাধীনভাবে কার্যকালের জন্য মেয়াদ স্থির রাখা অপরিহার্য। নয়া অর্ডিন্যান্সে তদন্তকারী সংস্থার অধিকর্তাদের সরকারের খুশি মতো কাজ করতে হবে, এমন ধারণাই তৈরি করছে।