কলকাতা ব্যুরো: তৃণমূলে টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভ, যন্ত্রণা গিয়ে শেষ হচ্ছে বিজেপিতে যোগ দিয়ে। প্রায় তিন ডজন বিধায়ক টিকিট পাননি। তারমধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনের ক্ষেত্রে বার্ধক্যজনিত কারণ উঠে এলেও বাকিদের অধিকাংশেরই কারণ কিন্তু অজানা। আর এই অজানা কারন কি? টিকিট না পাওয়া বিধায়করা পিকে অর্থাৎ প্রশান্ত কিশোরের কারসাজি বলে মনে করছেন। দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় সিটিং এমএলএ দের টিকিট না দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত তাদের ঘনিষ্ঠদের দাবি, প্রশান্ত কিশোর এবং দলের অন্য গোষ্ঠীর জোড়া আঘাতে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। সেই তালিকায় মেদিনীপুরের প্রদ্যুৎ ঘোষ, আশীষ চক্রবর্ত্তী থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা সোনালী গুহ, হাওড়ার জটু লাহিরিরা রয়েছেন।মূলত গত প্রায় ছ মাস ধরে তৃণমূলের ভোট পরামর্শদাতা পিকের দল জেলায় জেলায় ঘুরেছে। তৃণমূলেরই একটা অংশ তখন থেকেই তাদের তোষামোদ করেছে বলে অন্য অংশের অভিযোগ। তারা টাকা নিয়ে এই কাজ করলেও, জেলায় তাদের লোকজন গেলে ভালো হোটেলে রাখা, গাড়ির ব্যবস্থা থেকে উপধৌকন দিয়ে তখন থেকে খোসমদ করার অভিযোগ আগেই উঠেছে। যা দলেরই একাংশ পছন্দ করছিল না। যদিও সেই অংশ মুখেও এর প্রতিবাদ করেনি। আবার পিকের লকেদের চমচা বাজি করে টিকিট পাওয়ার ব্যাবস্থা করার মতো নিচে নামতেও পারেননি।আবার সেই সময়ে শীলভদ্র দত্ত থেকে মিহির গোস্বমির মত অনেক বিধায়ক পিকের এই ভোট পরামর্শ মেনে নিতে না পেরে প্রকাশ্যে মুখ খুলে পড়ে দল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। সেই তালিকায় সর্বশেষ ঘোষিত নাম সোনালী গুহ। যিনি গত প্রায় তিন দশক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া সঙ্গী হিসেবে ছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর তাকে বিধায়ক করা হলেও, কখনোই মন্ত্রিত্বের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। ফলে তা নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও সোনালীর অভিমান ছিল। কিন্তু এতদিন তা প্রকাশ করেননি।
কিন্তু এবার তৃণমূল প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতেই দেখা গেল সাতগাছিয়া বিধায়ক বাদ পড়েছেন। এর পরেই প্রথমে কান্না তারপর অভিমানে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোনালী। আর তার টিকিট না পাওয়ার কারণ যে সেই পিকে তাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন সোনালী। একইসঙ্গে তাকে বাদ দেওয়ার কারণ জানিয়ে দিদির একটা ফোন না পাওয়া তাকে একইসঙ্গে অভিমানী, অন্যদিকে ক্ষুব্ধ করেছে।গত বিধানসভা ভোটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে হারানোর অন্যতম কান্ডারী ছিলেন মেদিনীপুরের প্রদ্যুৎ ঘোষ। তিনি এমএলএ থাকার পাশাপাশি দলের সংগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু এবার টিকিট পাননি তিনিও। একইভাবে একসময় মমতার অন্যতম স্নেহভাজন গরবেতার বিধায়ক আশীষ চক্রবর্ত্তী বা নান্টি কেও এবার ভুলে গিয়েছেন নেত্রী। যেমনভাবে তালিকা প্রকাশের সময় সোনালীর নাম উল্লেখ করলেও, তার সঙ্গে একটিবার দল যোগাযোগ না করায় প্রবল কষ্ট পেয়েছেন তিনি।তৃণমূলেরই একাংশের মতে, এখানে যাবতীয় খেলাই খেলেছে পিকে এবং দলের অন্য গোষ্ঠী। দিনেন রায় টিকিট পেলেও প্রদ্যুৎ ঘোষের টিকিট না পাওয়ায় মেদিনীপুরের অনেকের কাছেই আশ্চর্যের। আবার সাতগাছিয়া বিধায়ক টিকিট না পাওয়ায় তারা মনে করছেন একই সঙ্গে পিকে এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠদের এটা কারসাজি। সব মিলিয়ে তৃণমূলের বর্তমান বিধায়কদের একটা বড় অংশই টিকিট না পাওয়ার কাঠ গড়ায় তুলেছে সেই পিকের লোকেদের। যাকে না কি ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে ভোটে জেতার জন্য ভাড়া করেছে তৃণমূল।