কলকাতা ব্যুরো: বিজেপির দুই জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দাল ইসলাম ধর্মগুরু হজরত মহম্মদকে উদ্দেশ্য করে যে সাম্প্রদায়িক বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন তা নিয়ে ইতিমধ্য তোলপাড় গোটা দেশ। নবীর অবমাননা নিয়ে বৃহস্পতিবার হাওড়ার অঙ্কুরহাটিতে দীর্ঘক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। পুড়ছে টায়ার। এদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত চলছে অবরোধ। এদিন টায়ারও জালান ক্ষুব্ধ জনতা। দীর্ঘ অবরোধে বম্বে রোডের মতো ব্যস্ত রাস্তায় বিরাট যানজট তৈরি হয়। ডোমজুড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েও অবরোধ তুলতে পারেনি। জাতীয় সড়ক অবরোধের ফলে কার্যত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে দক্ষিণ বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা। আর বিক্ষোভের জেরে ভয়ানক দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
এমন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে অবরোধ তুলে নেওয়ার কড়া নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে এদিন মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ঘৃণার রাজনীতিকে আমরাও সমর্থন করি না। আমার প্রশ্ন হল, বাংলায় তো কিছু হয়নি। যা হওয়ার দিল্লিতে হয়েছে। তা হলে এখানে অবরোধ করছেন কেন? কারও রাগ হলে দিল্লি যান। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। বাংলা শান্তির জায়গা। সেখানে অবরোধ করে কেন মানুষকে বিব্রত করছেন!
এদিন অঙ্কুরহাটিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ কারণে দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে শুরু করে কয়েক হাজার গাড়ি আটকে পড়ে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সকাল থেকে নবান্নে বসে দেখছি, হাজার হাজার গাড়ি আটকে রয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স আটকে রয়েছে, ফায়ার ব্রিগেড আটকে রয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের কোনও সীমা নেই। জাতীয় সড়ক আটকে দেওয়া মানে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। এতে কার লাভ হচ্ছে!
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের নামে অবরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু ইমাম অ্যাসোসিয়েশন বলে কিছু নেই। ইমামদের নেতৃত্ব দেয় নাখোদা মসজিদ। এখানে একজন ব্যক্তি নিজেকে ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের নেতা দাবি করে গণ্ডগোল পাকাচ্ছেন। পরে সাংবাদিক বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে নাখোদা মসজিদের ইমামকেও সামিল করা হয়। অবরোধ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তিনিও অনুরোধ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু নাখোদা মসজিদ নয়, ফুরফুরা শরিফ, খিলাফৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতারাও অবরোধ তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন সুতরাং আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি সবাইকে, দয়া করে রাস্তা অবরোধ করবেন না। দু-একজন গুণ্ডাগিরি করছে। তাঁদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।
পাশাপাশি বিজেপি নেতানেত্রীদের এই ঘৃণা ভাষণ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি টুইটে লিখেছেন, আমি কিছু বিজেপি নেতার সাম্প্রতিক জঘন্য ও নৃশংস ঘৃণাসূচক মন্তব্যের নিন্দা জানাই। এই ধরনের বক্তব্যে শুধু হিংসার বাতাবরণই তৈরি হয় না, দেশের সৌহার্দ্যের পরিবেশ বিভাজিত হয়। শান্তি ও বন্ধুত্বে তা বিঘ্ন ঘটায়। আমি জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি, বিজেপির অভিযুক্ত নেতাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। যাতে দেশের ঐক্য বিঘ্নিত না হয় এবং সাধারণ মানুষ মানসিক যন্ত্রণার সম্মুখীন না হন।