কলকাতা ব্যুরো: দিল্লির সীমানা থেকে এখনই কৃষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে না ৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানালেন ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত। তিনি জানিয়েছেন, যতক্ষণ না কৃষক বিরোধী তিনটি আইন সংসদে প্রত্যাহার করা হচ্ছে, ততক্ষণ কৃষকদের আন্দোলন চলবে। তবে, ৪০টি কৃষক সংগঠনকে নিয়ে গঠিত সংযুক্ত কিষান মোর্চা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এনিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। যেখানে বলা হয়েছে, কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে কেন্দ্রের নেওয়া সবরকম পদক্ষেপের উপর তারা নজর রাখবে এবং দ্রুত বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নয়া তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তবে, কেন্দ্র পিছু হটলেও কৃষক সংগঠনগুলি এখনই আন্দোলন প্রত্যাহারের পথে যাবে না বলে জানিয়ে দিলেন ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত ৷ রাকেশ টিকায়েত বলেন, সংসদে কৃষি আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভ চলবে ৷ সেই সঙ্গে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যও সরকারকে ঘোষণা করতে হবে ৷ এনিয়ে আজ সংযুক্ত কিষান মোর্চা বৈঠকে বসবে ৷ সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷
কেন্দ্রীয় সরকারের পিছু হটার কারণ জানিয়ে টিকায়েত বলেন, গত একবছরে দেশজুড়ে বিজেপি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে ৷ তাই নিজেদের মুখ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে পিছু হটেছে মোদী সরকার ৷ এদিন সকালে এনিয়ে একটি টুইটও করেন রাকেশ টিকায়েত ৷ সেখানেও একই কথা বলেন ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা ৷ তিনি বলেন, এখনই আন্দোলন তুলে নেওয়া হবে না ৷ আমরা সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করব, যেদিন সংসদে কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে ৷ আর সেই সঙ্গে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হবে ৷ আর সরকারকে অন্যান্য সমস্যাগুলি নিয়েও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে ৷
তবে, রাকেশ টিকায়েতকে যতটা না আগ্রাসী মনোভাব নিতে দেখা গিয়েছে ৷ তার থেকেও বেশ কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে ৪০টি কৃষক সংগঠনকে নিয়ে তৈরি সংযুক্ত কিষান মোর্চা’ ৷ সংগঠনের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে,কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে ৷ সেই সঙ্গে কেন্দ্রের পরবর্তী পদক্ষেপের উপরেও তারা নজর রাখবে বলে জানানো হয়েছে। সেই মতো সংযুক্ত কিষান মোর্চার বৈঠকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷
মোর্চার তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সংযুক্ত কিষান মোর্চা সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে এবং সেইসঙ্গে যথাযথ সংসদীয় পদ্ধতির মাধ্যমে ঘোষণা কার্যকর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হবে ৷ এটা যদি সত্যি হয় ! তবে, ভারতের কৃষকদের একবছর ধরে চলা এই আন্দোলনের ঐতিহাসিক জয় হবে ৷ এই লড়াইয়ে প্রায় ৭০০ জন কৃষক শহিদ হয়েছেন ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তে এই কৃষকদের মৃত্যুর কারণ ৷ সেই সঙ্গে লখিমপুর খেরির ঘটনার জন্যও তারাই দায়ী ৷
তবে, কৃষকদের আন্দোলন যে শুধু কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে নয় ৷ সেটাও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মনে করিয়ে দিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্ব। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা এবং সংশোধিত বিদ্যুৎ আইন প্রত্যাহারের বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছে মোর্চা ৷ এনিয়ে দ্রুত সংগঠনের তরফে বৈঠকে বসা হবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর সংসদে নয়া তিনটি কেন্দ্রীয় কৃষি আইন পাশ করায় এনডিএ সরকার ৷ যে আইন কৃষকদের স্বার্থবিরোধী বলে দাবি করে ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লি সীমানায় আন্দোলন শুরু করে কৃষকদের একাংশ ৷ মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা রাজধানীর বিভিন্ন সীমানায় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে ৷
এমনকি এবছর ২৬ জানুয়ারি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকদের লালকেল্লা অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে। এরপর একাধিকবার সংযুক্ত কিষান মোর্চার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠক হয়। যেখানে তিনটি কৃষি আইন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থাকেন কৃষকরা ৷ যার ফলস্বরূপ এবার পিছু হটল কেন্দ্র ৷