কলকাতা ব্যুরো: রবিবারের লখিমপুর কাণ্ডের আঁচ সোমবার এসে পড়লো উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউতে ৷ সোমবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব লখিমপুর যেতে চাইলে তাঁকে বাধা দেয় পুলিশ ৷ পরে তাঁকে আটক করা হয় ৷ অভিযোগ, অখিলেশ এদিন বাড়ি থেকে বেরনোর আগেই তাঁর বিক্রমাদিত্য মার্গের বাড়ির বাইরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয় ৷

জানা গিয়েছে, পুলিশের নিষেধ সত্বেও এদিন সকালে লখিমপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ি থেকে বের হন অখিলেশ যাদব ৷ কিন্তু তাঁকে বাধা দেয় পুলিশ ৷ প্রতিবাদে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বাড়ির সামনেই ধর্নায় বসে পড়েন তিনি ৷ সেখান থেকেই তাঁকে আটক করে পুলিশ ৷ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সপা সমর্থকরা ৷ তাঁরা আগুন ধরিয়ে দেন একটি গাড়িতে ৷

এদিন সপা প্রধান বলেন, ‘‘এই সরকার কৃষকদের সঙ্গে যে নৃশংসতা দেখাচ্ছে, ব্রিটিশরাও সেরকম আচরণ করেনি ৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় মিশ্র এবং রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যের পদত্যাগ করা উচিত ৷’’ মৃতদের পরিবারকে ২ কোটি টাকা করে আর্থিক সাহায্য ও চাকরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি ৷

পাশাপাশি সোমবার লখিমপুর খেরি যাওয়ার পথে আটকে দেওয়া হয় কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাকে ৷ এমনকি তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে কংগ্রেসের ৷ সোমবার লখিমপুর যাওয়ার পথে সীতাপুরের কাছে হরগাঁও নামে একটি জায়গা থেকে প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন যুব কংগ্রেসের সভাপতি শ্রীনিবাস বিভি। তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী সীতাপুরের পুলিশ হেফাজতে ঘর পরিস্কার করে অনশনে বসেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরা। প্রিয়াঙ্কার দাবি একটাই শহীদ কৃষক-পরিবারদের এবং আন্দোলনরত কৃষকদের  সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে।

রবিবার, লখিমপুর কাণ্ডের পরেই কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছিল সোমবারই দুর্ঘটনাস্থলে যেতে পারেন প্রিয়াঙ্কা ৷ জানা গিয়েছিল, মৃত কৃষকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি ৷ রবিবার রাতেই লখনউ বিমানবন্দরে পৌঁছে যান প্রিয়াঙ্কা ৷ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে প্রথমে কিছুটা পায়ে হেঁটে ও পরে গাড়ি করে লখিমপুর যাওয়ার চেষ্টা করেন প্রিয়াঙ্কা ৷

কংগ্রেসের অভিযোগ, এরপর লখিমপুর যাওয়ার পথে দফায় দফায় প্রিয়াঙ্কাকে বাধা দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ৷ পরে সীতাপুরের কাছে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷ গোটা ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রিয়াঙ্কা ৷ উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে তাঁর প্রশ্ন, “নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াতে চেয়ে আমি কি কোনও অপরাধ করেছি? তাহলে কেন ওয়ারেন্ট ছাড়া আমাকে আটকানো হচ্ছে?” সরকার রাজনীতি করে কৃষকদের বিপদে ফেলতে চাইছে বলেও তাঁর অভিযোগ ৷


অন্যদিকে, এদিনই লখনউ বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় পঞ্জাব ও ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রীদের ৷ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নি ও ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের সোমবার লখিমপুর যাওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু লখনউ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় লখিমপুর খেরিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, তাই সেখানে কোনও নেতাকে যেতে দেওয়া হবে না ৷

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের নয়া তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদে রবিবার উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর। উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যর কর্মসূচির প্রতিবাদে এদিন সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষকরা ৷ অভিযোগ, সেসময় আন্দোলনরত কৃষকদের উপর গাড়ি চালিয়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে ৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২ জনের ৷ পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও বেশ কয়েকজনের ৷ ঘটনায় মোট ৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে ৷ তার মধ্যে ৪ জন কৃষক ৷ এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কৃষকরা, শুরু হয় অশান্তি ৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি গাড়িতে ৷ তবে উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে নিহত ৪ কৃষক পরিবার পিছু ৪৫ লাখ টাকা ও সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আহতদের পরিবার পিছু ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।

গোটা ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করে ঘটনার তদন্তের দাবি জানান হয়েছে সংগঠনের তরফে ৷ তবে বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির দাবি, ওই আন্দোলনে কৃষকদের ছদ্মবেশে বেশকিছু দুষ্কৃতী ছিল ৷ তারাই এই ঘটনার জন্য দায়ী ৷ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে তাঁর গাড়ির ড্রাইভারকেও ৷

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version