ছবি ও প্রতিবেদন — গৌর শর্মা
প্রতি বছর আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র দিবসের দিন কয়েক আগেই তিনি বাক্স থেকে সযত্নে নামিয়ে ঝাড়পোছ শুরু করেন পুরনো ক্যামেরা গুলির। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ক্যামেরা গুলির দিকে। আপন মনে কোন ক্যামরার লেন্স পরিস্কার করেন নতুবা টাইট করেন পুরনো ক্যামেরার স্কুরু। ক্যামেরা গুলিও যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ১৯ আগষ্ট আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র দিবস দিনটির জন্য।
আসানসোলের আশপাশের জেলাসহ ঝাড়খন্ড –বিহারের আলোকচিত্রীদের কাছেও প্রফুল্ল রায় একটি সুপরিচিত নাম। এই অঞ্চলে ফটোগ্রাফির সাথে যুক্ত এমন মানুষ খুব কমই আছেন, যিনি প্রফুল্ল রায়ের কাছে ক্যামেরার জন্য কোন না কোনভাবে শরণাপন্ন হননি। প্রফুল্ল রায় একজন স্বনাম ধন্য ক্যামেরা মেকনিক শুধু নন, তিনি পুরনো ক্যামেরার সংরক্ষক। জোরকি, রিকো, রোলিফ্লেক্স, পেনটেক্স, অলিম্পাস-পেন .ইয়াসিকা বক্স ও ইয়াসিকা ৩৫, ক্যানন, জেনিথ, কোসিনা, মিনোল্টা সহ জেনাবক্সের মতো একশো বছরের বেশী প্রাচীন ৫৮ টি প্রাচীন ক্যামেরা রয়েছে প্রফুল্ল রায়ের সংগ্রহে।
ছোটবেলা থেকেই ফটোগ্রাফির প্রতি ঝোঁক ছিল প্রফুল্ল রায়ের। ১৯৫৫ সালে ঊষাগ্রাম বয়েজে নবম শ্রেনীতে পড়াকালীন দার্জিলিংয়ে এন,সি,সি ক্যাম্পে প্রথম ছবি তোলেন প্রথম এভারেষ্ট জয়ী তেনজিং নোগরের। তিনি জে,কে,নগর আলুমিনিয়াম কারখানা উদ্বোধনে পন্ডিত জহরলাল নেহেরু ও রবীন্দ্র শতবর্ষে শান্তিনিকেতনে সর্বপল্লী রাধাকিষনের ছবি ক্যামেরা বন্দী করেন । শুরু হয় তার ফটোগ্রফি চর্চা। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে ধাদকা পলিটেকনিক থেকে পাশ করে আসানসোল পিলকিংটন কাঁচ কারখানায় চাকরীতে যোগ দেন তিনি।পরবর্তীকালে কাঁচ কারখানায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রফুল্ল বাবু ক্যামেরা মেরামতিকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। এই সময় তিনি প্রচুর পুরনো ক্যামেরার সংস্পর্শে আসেন এবং উৎসাহিত হন পুরনো ক্যামেরা সংরক্ষনে ।
বর্তমানে বয়স জনিত কারনে অসুস্থ হলেও প্রফুল্ল বাবু এখনও নিত্য নতুন ক্যামেরার মেকানিজিম নিয়ে চর্চা করেন। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র দিবসে আসানসোল প্রেস ক্লাবে প্রদর্শনীর জন্য ক্যামেরা গুলো নিয়ে আসেন প্রফুল্ল বাবু। করোনা বিধি মেনে এবছরও তার ক্যামেরা প্রদর্শনী হচ্ছে আসানসোল প্রেস ক্লাবে।