কলকাতা ব্যুরো: রবিবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচন। আর এদিন সকাল থেকে মুখভার আকাশের। সকাল থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েই চলেছে শিলিগুড়ি মহকুমার চারটি ব্লকে। আর সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন ভোটাররা। তবে, বৃষ্টি হলেও ভোটের উত্তেজনায় খামতি নেই। আর নির্বাচনী উত্তেজনায় সবার আগে ফাঁসিদেওয়া ব্লক। যেখানে লড়াইটা কাকা ও ভাইপোর মধ্যে।

এদিন ভোট শুরুর আগে থেকেই ফাঁসিদেওয়া ব্লকে উত্তেজনার তৈরি হয়। ওই ব্লকের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী আইনুল হক এবং নির্দলপ্রার্থী তাঁর ভাইপো আখতার আলি। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে শাসক দলের টিকিট না পেয়ে নির্দলপ্রার্থী হয়ে ভোট লড়ছেন আখতার। এদিন সকাল থেকে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। চটহাট প্রাইমারি স্কুল, খালপাড়া প্রাইমারি স্কুল ও তুফানডাঙ্গি এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। সংঘর্ষে ৫ জনের মাথা ফেটেছে বলে জানা গিয়েছে। মূলত এজেন্ট বসা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত।

ফাঁসিদেওয়ায় অশান্তির ঘটনা ঘটলেও, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি ও খড়িবাড়ি ব্লকে আপাতত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটপর্ব চলছে। এদিন ভোটের শুরুতেই সমরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠিকনিকাটা জুনিয়র হাইস্কুল, মাটিগাড়া উচ্চবিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ইভিএম খারাপ হয়ে যায়। পরে অবশ্য ইভিএম বদল করলে, স্বাভাবিক ছন্দে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

এছাড়া এদিন শিলিগুড়ির কাওয়াখালীর ৩৬ নং বুথে উত্তেজনার খবর পাওয়া গিয়েছে। সেখানে নির্দল সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। বচসা এবং হাতাহাতিতে মাথা ফেটেছে নির্দল সমর্থকদের। গুরুতর জখম বেশ কয়েকজন। এলাকায় মোতায়েন বিশাল পুলিস।

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৫লক্ষ ২৭ হাজার ৯৩৮জন। তার মধ্যে মহিলা ভোটার রয়েছে ২লক্ষ ৬৪হাজার ৪৬৭জন ও পুরুষ ভোটার রয়েছে ২লক্ষ ৬৩হাজার ৪৬৮জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ৩জন ভোটার রয়েছে। এই নির্বাচনে ৩৮২টি ভোটকেন্দ্রে থাকছে ৬৫৭টি বুথ। যার মধ্যে ১০৩টি অক্সিলারি বুথ রয়েছে। মোট ৫৩৭টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। যার মধ্যে ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৬২টি আসন, ৪টি পঞ্চায়েত সমিতির ৬৬টি আসন ও মহকুমা পরিষদের ৯টি আসন।

১৯৮৮ সালে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গঠিত হলে সাংবিধানিক তথা ভৌগোলিক বাধ্যবাধকতার কারণেই ১৯৮৯ সালে দেশের একমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদটি গঠিত হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের শাসন ক্ষমতা ছিল বামফ্রন্টের হাতে। বর্তমানে রাজ্যে এবং শিলিগুড়ি পুরনিগমে ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেস মরিয়া এবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ দখল করতে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিলিগুড়ি পুরো নিগমের পর এবার প্রথমবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদও তৃণমূল কংগ্রেস দখল করতে চলেছে।

তবে শুধুমাত্র পাহাড় বা শিলিগুড়ি নয়, নির্বাচন রয়েছে রাজ্যের ৬ পুর ওয়ার্ডেও। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই সকলের নজরে রয়েছে ঝালদা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এবং পানিহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কারণ, পুরভোটে জেতার পরই দুই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিকেই খুন করা হয়। এছাড়া দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ড, দমদম পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ও ভাটপাড়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং হুগলির চন্দননগর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেও উপনির্বাচন চলছে।

গত মার্চ মাসে সদ্য পুরভোটে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী তপন কান্দুর মৃত্যুর পরই খবরের শিরোনামে আসে পুরুলিয়ার ঝালদা ৷ আজ ঝালদার সেই ২ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে উপনির্বাচন ৷ কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করেছে তপনের ভাইপো মিঠুনকে। এদিন তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে তপন কান্দু অমর রহে লেখা-সহ ব্যানার লাগানো ছিল। খবর পাওয়ার পরই নির্বাচন কমিশনের তরফে সেগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়।

যদিও মিঠুনের অভিযোগ, ১০০ মিটারের বাইরেই ব্যানার লাগানো ছিল ৷ কিন্তু পুলিস তপন কান্দুর নামে লেখা ব্যানারই সরিয়ে দেয়। বাকি দলের ব্যানার এখনও সেখানে রয়েছে। এ ব্যাপারে তৃণমূল প্রার্থী জগন্নাথ রজক বলেন, আজ সকাল থেকে আমারও ব্যানার নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। এ নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।

এদিন উত্তর ২৪ পরগনার চারটি পুরসভার চারটি ওয়ার্ডে চলছে ভোটগ্রহণ। কেন্দ্রগুলি হল দমদম পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড, ভাটপাড়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড, পানিহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ড। পানিহাটি বাদে বাকিগুলি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত ছিল ৷ উল্লেখ্য, ঝালদার মতো পানিহাটিতেও খুন হন তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্ত ৷ তাঁর মৃত্যুতে ফাঁকা হয় আসনটি ৷ এছাড়া দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটা সমস্যা ছিল ৷ অন্যদিকে ভাটপাড়ায় পুর নির্বাচনের দু’দিন আগে মৃত্যু হয় বাম প্রার্থী বাবলী দে’র ৷ যে কারণে ওই সময় নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়নি ৷ এদিন ওই কেন্দ্রগুলির সঙ্গে ভোটগ্রহণ চলছে চন্দননগর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৷

এদিকে ভাটপাড়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনে ১০৫নং বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৷ পুলিশের সামনেই এক একজন ৫টি করে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী প্রার্থীদের এজেন্টরা। ভাটপাড়ার হিন্দু স্কুলের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এজেন্টদের অভিযোগ, কুড়িটার বেশি ফলস ভোট পড়েছে। অভিযোগ, যাঁরা এই ছাপ্পা ভোট দিচ্ছেন, তাঁদের কারও কাছে পরিচয়পত্র নেই। এনিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ওয়ার্ডে গত পুরসভা নির্বাচনে সিপিআইএম প্রার্থী বাবলি দে’র মৃত্যুর কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায় ৷

তবে এদিন চন্দননগর সারদাসাধন গার্লস স্কুলে ভোটগ্রহণ নির্দিষ্ট সময়ে শুরু করা যায়নি কারণ ভোটারদের মোবাইল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ঢোকার অনুমতি না-দেওয়ায় ভোট বন্ধ করে দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। পরে নির্বাচনী আধিকারিক এসে মোবাইল সুইচ অফ করে ভোটকেন্দ্রে ঢাকার অনুমতি দিলে সাধারণ ভোটাররা ভোটপ্রদান শুরু করেন অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর চন্দননগর পুরনিগমের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এদিন ভোট শুরু হওয়ার আগেই চার দলের প্রার্থীদের দেখা যায় একসঙ্গে সরব হতে। ভোটারদের মোবাইল নিয়ে বুথে ঢুকতে দিতে হবে, না হলে ভোট বন্ধ থাকবে বলে সোরগোল শুরু করেন তারা। সর্বদলীয় বৈঠকে মোবাইল নিয়ে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি বলেও দাবী তাদের। এদিন ভোটাররা প্রায় সকলেই মোবাইল নিয়ে ভোট দিতে আসেন। তাই নির্ধারিত সময়ে ভোট গ্রহন শুরু করা যায়নি। প্রায় দশ মিনিট পর প্রিসাইডিং অফিসার ভোটারদের মোবাইল সুইচড অফ করে বুথে ঢোকার অনুমতি দিলে ভোট গ্রহন শুরু হয়।

গতবার এই ওয়ার্ড ছিল তৃনমূলের দখলে। চন্দননগর পুর নিগমের ৩৩ টি ওয়ার্ড। ৩২ ওয়ার্ডে ভোট হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারী। একটি মাত্র ওয়ার্ডে জিতে কাউন্সিলর হন সংযুক্ত নাগরিক কমিটির বাম প্রার্থী।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version