কলকাতা ব্যুরো: নানা বিষয় ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই দ্বন্দ্বে কোন সময় ভারত জেতে, কোন সময় জয়ীর হাসি হাসে পাকিস্তান। যার সর্বশেষ উদাহরণ বাসমতি চাল। মূলত বিরিয়ানি তৈরির এই সুগন্ধি চালের উপর নিজেদের খবরদারি কায়েম করে ফেলল পাকিস্তান। এই চালে জিআই ( জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেটর ) ট্যাগ পেয়ে গেল ইসলামাবাদ। ফলে বাসমতি তাদের নিজস্ব চাল বলে বিশ্বের কাছে দাবি করতে কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে গেল ইমরান খানের সরকার।
বাসমতি চাল ভারতেও যথেষ্টই উৎপাদন হয়। এবং তার চাহিদাও রয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে এই চালের জি আই তকমা পেতে আবেদন করলেও আপাতত এই যাত্রায় এগিয়ে গেল ইসলামাবাদ।
তবে ভারতের সঙ্গে বৈরীতাই যাদের অন্যতম সম্পদ, তারা নিজেরা যতই ভালো অবস্থানে থাকুক, অপরের কোন কিছুতেই যে সন্তুষ্ট থাকে না তার প্রমান এই বাসমতির লড়াই। পাকিস্তান জিআই ট্যাগ পেয়ে গেলেও ভারতের ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আবেদন নিয়েও তাদের প্রবল আপত্তি। পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আজ বাদে কাল যদি ভারতের বাসমতি একই স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাতে তাদের নিজস্ব রফতানির উপর প্রভাব ফেলবে। ভারত যদি এই ট্যাগ প্রয়োগ করতে পারে তাহলে পাকিস্তান কম মুনাফা অর্জন করতে পারবে। পাকিস্তানকে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক মুনাফা দেয় বাসমতি চাল। পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী বাসমতী চালের ৩৫ শতাংশ রফতানি করে। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০১৭ সালের এক লক্ষ ২০ হাজার টন থেকে ২০১৯ সালে রপ্তানি বেড়ে হয়েছে তিন লক্ষ টন। বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাকিস্তানের বাসমতির প্রধান বাজার।
আবার ভারত বাসমতি ধানের বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ। পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম ধান রফতানিকারক দেশ, বার্ষিক ৬.৮ বিলিয়ন ডলার আয় করে এই ধান বিক্রি করে। পাকিস্তান একই চল বিক্রিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে, ২.২ বিলিয়ন ডলার।
ভারতে হিমালয়ের পাদদেশে গাঙ্গেয় সমভূমিতে দানাদার, সুগন্ধি এই ধানের চাষ হয়। আধুনিক ভারতে এই অঞ্চলটি হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি এবং জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রবি ও চেনাব নদীর মধ্যে অবস্থিত কালার ট্র্যাক্টেও বহু শতাব্দী ধরে বাসমতী জন্মায়। অর্থাৎ ভারতের দাবি, যৌথ মালিকানার অঙ্গীকার বাসমতি চাল।
এখন বাসমতি কে স্বীকৃতি পেয়ে পাকিস্তান সামান্য এগিয়ে গিয়ে ভারতকে পেছনে ফেলার চেষ্টা করলেও এক দশক আগেও ছবিটা ছিল অন্যরকম। তখন দুই দেশ বাসমতি ধানের জন্য ভৌগলিক স্থিতির জন্য যৌথভাবে প্রয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেছিল। ২০০৬ সালে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ পণ্য হিসাবে বাসমতীকে স্বীকৃতি দেওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তবে ২০০৮ সালের মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে এই আলোচনা ভেস্তে যায়। ভারত পাকিস্তানের উপর দোষ চাপায় এবং এখনো পর্যন্ত সম্পর্কের খুব উন্নতি হয়নি।
মধ্যপ্রদেশ সরকার তার বাসমতি ধানের জাতগুলিকে জিআই মর্যাদা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বহু দিন ধরে তদবির করে চলেছে, এমনকি বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের কাছেও নিয়ে গেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে বাসমতির জিআই ট্যাগ আদায় করতে ভারতের এখন লক্ষ্য এবছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। ততদিন মধ্যপ্রদেশ বা যে কোন রাজ্য এ নিয়ে যতই দরবার করুক, আপাতত তা কানে ঢুকবে না ভারত সরকারের।