মৈনাক শর্মা
অস্ট্রেলিয়া জাপান, চিন, কম্বোডিয়ার মতো ১৫ দেশ মুক্ত বাণিজ্যের চুক্তি সই করল। বহু প্রতীক্ষিত এই চুক্তি হওয়ায়, আগামী দিনে এই গোষ্ঠীর আওতায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক দেওয়া নেওয়া চলবে। যা এই চুক্তিবদ্ধ দেশগুলির মধ্যে পণ্যের আমদানি রপ্তানি আরো বৃদ্ধি করে বাণিজ্যিক প্রসারে সহায়তা করবে। এতে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলির বাণিজ্যিক বাজার আরো চাঙ্গা হবে বলে আশা অর্থনীতিবিদদের। কিন্তু ভারতের মতো বৃহত্তর বাজার যেখানে, সেই দেশ আলোচনা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত এই চুক্তিতে নাম না লেখানোয় এর সম্প্রসারণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক মহলে। একদিকে ভারতের বৃহত্তম বাজার ধরার জন্য তৎপর অন্যান্য চুক্তিবদ্ধ দেশগুলি, আবার ভারতের ক্ষেত্রে বর্তমানে শত্রুভাবাপন্ন চিনের মতো দেশের সঙ্গে এই চুক্তিতে থাকা দেশের শাসকদের পক্ষে কতটা ঠিক হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বা রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশীপ (RCEP ) তে ব্রুনেই, কাম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া মায়ানমার এর মতো ১০ টি এশিয়ান দেশ ও অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ড সাক্ষর করলো। এক কথায় বলতে গেলে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশীপ (RCEP )র মাধ্যমে সাক্ষর করা দেশগুলি খুব সহজে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক আদান প্রদান, বাণিজ্যিক শুল্ক বা ডিউটি ফ্রি তে ছাড় পাবে। অর্থাৎ এক সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সুলভ মূল্যে পৌঁছে যাবে অন্য সদস্য দেশগুলির উপকরণ।
আমেরিকাতে রাজনৈতিক পালা বদলে ওয়াসিংটন ও বেজিংয়ের দূরত্ব কম হওয়ায় লক্ষে আশা রেখে ২০১৩ সালের আলোচিত হওয়া চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক দিন থেকে আলোচিত হওয়া বিশ্বের এই বড় বাণিজ্য চুক্তিতে ভারত ১৬ তম দেশ হয়ে উঠতে অসহমত হয় অনেক আগেই। এর আগেও দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বা SAFTA চুক্তিতে ভারত সহ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলংকা সাক্ষর করে।
কিন্তু দিল্লি ও ইসলামাবাদের সাথে বাড়তে থাকা দূরত্বের কারণে এই চুক্তিও সফল হয়নি। প্রতিবেশী ও প্রতিপক্ষ চীনের সাথে এর পুনরাবৃত্তি আবার হতে পারে। তাছাড়া দিল্লির মতে, এই মুক্ত বাজার বাণিজ্যের ফলে ক্ষতি হতে পারে দেশীয় বাণিজ্য গুলির। দিল্লির এই যুক্তির সাথে সহমত অনেকেরই।
শুধু তাই নয়, এই চুক্তির ফলে চিনের বাণিজ্যিক দাপট বাড়বে বলে মত আর্থিনীতিবিদের। ভারতের বাজারে বেড়ে উঠা চিনা উপকরণকে আটকাতেও দিল্লির এই সীধান্ত। তাছাড়া ভারতীয় উপকরণ চিনের উপকরণ গুলির তুলনাতে, বিশ্ব বাজারে কতটা মন জয় করতে পারবে, এই প্রশ্নেই ভয় দিল্লির। অর্থাৎ দেশীয় উপকরণ গুলির উপর আস্থা রাখতে পারছে না খোদ দিল্লিই। ভারতের থিংক ট্যাঙ্ক, নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লির সাথে এশিয়ান দেশেগুলির সাক্ষর হওয়া ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানি ও ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর রপ্তানি হয়। মানে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার এর বাণিজ্যিক ঘাটতি লক্ষণীয়। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রেও একই তথ্য সামনে আসে। এর ফলে বার বার প্রমান হয়, ভারতীয় উপকরণ গুলি মুখ থুবড়ে পড়ছে বিশ্ব বাজারে।
গত অর্থবর্ষে ঘরেলু উৎপাদন বা জিডিপি তে দ্রুত পতনগামী ভারতের RCEP তে অসহমত দিল্লির জন্য বাণিজ্যিক ক্ষতি বলে মত আরেক অংশের। স্বাধীনতার পর থেকেই দিল্লির ইন্ডিয়া ফার্স্ট নীতির সরকার দ্বারা আগলে রাখা দেশীয় কোম্পানিগুলিকে কোনো প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়নি। এর ফলে অন্যান্য দেশের তুলনাতে পিছিয়ে পড়ছে স্বদেশী উপকরণ গুলি। এই চুক্তির ফলে প্রতিযোগিতার পরিবেশে ভারতীয় উপকরণ গুলির উন্নতিতে লাভ হতো বলে মত অর্থনীতিবিদেরদের। নেটিজেনদের মতে আত্মনির্ভর ভারত এর মাধ্যমে আবার দেশীয় কোম্পানি গুলিকে আগলে রাখবার পথে হাটছে দিল্লি।
ভবিষ্যতে আমেরিকার ট্রামস প্যাসিফিক পার্টনারশীপ ( TPP ) মুক্ত বাণিজ্য নীতির মতো ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট এ যুক্ত হতে গেলে বা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য, অর্থনীতিকে প্রস্তুত করতে ভারতের ভূমি অধিগ্রহণ, উপযুক্ত ও সহজতর শ্রম আইন সংস্কার ও ফ্রেম নীতির মাধ্যমে স্বদেশী উপকরণ গুলির গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে।