শনিবার সোদপুর থেকে ধর্মতলা ন্যায় বিচার যাত্রা

By admin

October 18, 2024

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে কর্মবিরতি থেকে ধরনা তারপর অনশন, জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয় গত ৯অগস্ট৷ ওই ঘটনার পর থেকেই জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন শুরু করেন৷ ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সমাজের বিভিন্নস্তরে৷ জুনিয়রদের আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ান সিনিয়র ডাক্তাররা৷ আদালতের নির্দেশ মতো এখনও সেই ঘটনার তদন্তভার রয়েছে সিবিআইয়ের হাতে৷ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে৷ আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে৷ সন্দীপ ঘোষ-সহ বেশ কয়েকজন দুর্নীতির মামলাতেও গ্রেফতার করা হয়েছে৷ সেই মামলার তদন্তভারও রয়েছে সিবিআইয়ের হাতে৷

এখনও জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন চলছে। তার মধ্যেই এবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এবার তাঁরা ডাক দিলেন ন্যায় বিচার যাত্রার৷ আমরণ অনশনকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে ও ন্যায় বিচারের দাবিতে আগামী শনিবার এই যাত্রার ডাক দিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। তাঁরা জানিয়েছেন, শনিবার নিহত ওই তরুণী চিকিৎসকের বাড়ি সোদপুর থেকে ধর্মতলার অনশন মঞ্চ পর্যন্ত এই যাত্রা হবে। তার সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ওই একই সময়ে ন্যায় বিচার যাত্রাও করা হবে বলে জানিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। অন্যদিকে এদিন স্বাস্থ্য ভবনের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। তাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টে মিথ্যাচার করছে রাজ্য সরকার। যে কাজের খতিয়ান স্বাস্থ্য ভবনের তরফে সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ নয়৷ নিজেদের দাবির সমর্থনে একাধিক ছবিও দেখিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেখানে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের তরফে ড. সত্যজিৎ সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টোর সময় তাঁরা যে ছবি তুলেছেন তাতে কোথায় কী কাজ রয়েছে, তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন, কেন এই মিথ্যাচার?

জুনিয়র চিকিৎসক সত্যজিৎ সরকার আরও বলেন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যে রিপোর্ট অধ্যক্ষের কাছে জমা দিয়েছিলেন, সেখানে ৮৩৯টি সিসিটিভির প্রয়োজন আছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন অনুমতি দিয়েছে ৩৬০টির। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ বলছে এখনও বসানো হয়েছে ৩৩১টি। এর প্রমাণ আছে জুনিয়ার ডাক্তারদের কাছে। বহু জায়গায় সিসিটিভি বসানো এখনও বাকি। স্বাস্থ্যসচিব মিথ্যাচার করছেন। ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের কাছে। এর সঙ্গে তাঁরা জানতে পেরেছেন, এই সিসিটিভি বসানো হয়েছে মাত্র ৪৫ দিনের জন্য। উল্লেখ্য, জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলন এখনও থামেনি৷ আরজি কর ধর্ষণ-খুনে ন্যায় বিচার, হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি-সহ দশদফা দাবিতে অনশনের পাশাপাশি একাধিক কর্মসূচি নিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা৷ তেমনই একটি কর্মসূচি হল ন্যায়বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান৷ সাধারণ মানুষ সই করে ডাক্তারদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করলেন৷ এ দিন ধর্মতলা থেকে এই স্বাক্ষর অভিযান শুরু হয়৷ তার পর তা সফল করতে ধরনা মঞ্চ থেকে তিনটি গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় রওনা হয়৷ তিনটি গাড়ি শ্যামবাজার, শিয়ালদা ও যাদবপুরে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে।

আগামী শনিবার সোদপুর থেকে ধর্মতলার অনশনমঞ্চ পর্যন্ত ন্যায় বিচার যাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বলা হয়েছে অনশনকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সোদপুর থেকে ধর্মতলার অনশনমঞ্চ পর্যন্ত ন্যায় বিচার যাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। ন্যায় বিচার যাত্রার সময় পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, বাংলার বিভিন্ন যাত্রায় নারী সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত। বাংলার বিভিন্ন জায়গায় একই দিনে সমস্ত নাগরিক মঞ্চের তরফ থেকে ন্যায় বিচার যাত্রার আয়োজন করুন। প্রথম দিন থেকে যেভাবে প্রতিবাদে রয়েছেন সেটা চালিয়ে যান। যে মানবিক সরকারের কথা বলা হত সেই সরকারের যে অমানবিক মুখ দেখতে পাচ্ছি তাতে আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তার। গণস্বাক্ষর অভিযান যেমন চলছে তেমনি চলবে। রাজ্যের জেলায় জেলায় এই কর্মসূচি পালন করা হবে। 

হাসপাতালগুলি থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার প্রত্যাহার  প্রসঙ্গে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, “আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরেও দেখা যাচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে আজ পর্যন্ত হাসপাতাল পাহারা দেওয়ার কাজ চলছে। তাঁরা জানিয়েছেন, এই লড়াই জুনিয়র ডাক্তারদের লড়াই নয়। এটা সাধারণ মানুষের লড়াই। এটা গণ আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। তবে কোনও রাজনৈতিক দলকে আমরা এই ধর্নামঞ্চে এসে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে দেব না”। এই মঞ্চে এসে  দলীয় কোনও কাজকর্ম করতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা।  তাঁরা এও জানিয়েছেন, এই লড়াই কেবলমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের লড়াই নয়। এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের লড়াই আন্দোলন। এই আন্দোলন কার্যত গণ আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।   এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। অনশন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। অনিকেত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও শারীরিকভাবে এখনও যথেষ্ট দুর্বল। ৬ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন। অনিকেত মাহাতোর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাঃ সোমা মুখোপাধ্যায় জানান, নির্দিষ্ট সময় পর অনিকেত মাহাতোর প্রেসার মাপতে হবে। খেতে হবে প্রচুর পরিমাণ জল। আর আপাতত তিনি এখন অনশনে যোগ দিতে পারবেন না। আপাতত অনশনে যাচ্ছেন না অনিকেত। তবে লড়াইয়ের মঞ্চ ছাড়ছেন না।