প্রতিদিন প্রতিনিয়ত কত যে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলে চারপাশে তার হিসাব রাখা যায়না। তবে আমরা যখনই সেই অদ্ভুত ঘটনার কথা শুনি তখন নয় অবাক হই, কখনও কখনও আনন্দ পাই আবার অনেক সময় সেই ঘটনার জন্য খারাপও লাগে। আসলে এখানে এমনই একটি গ্রামের কথা বলতে চলেছি যেটি ব্যাচেলরদের গ্রাম নামে পরিচিত। আমাদের দেশের এই অদ্ভুত গ্রামটি বিহারের কাইমুর জেলায় অবস্থিত। এই গ্রামের নাম বারোয়ান কালান। অনেকেই ভাববেন যে এমন কী হল যে এই গ্রামটিকে ‘ব্যাচেলরদের গ্রাম’ বলতে হচ্ছে। আসলে এই গ্রামে অনেক ব্যাচেলর ছেলে আছে কিন্তু তারা বিয়ের জন্য কোনো মেয়ে খুঁজে পাচ্ছে না। মজার ব্যাপার হল এর জন্য সরকার ছাড়া অন্য কেউ দায়ী নয়। এই গ্রামে এমন অনেক পুরুষ আছেন যারা বিবাহিত নন। যার মধ্যে রয়েছে যুবক থেকে বৃদ্ধ।
কথিত আছে এই গ্রামে গত ৫০ বছরে কেউ বিয়ে করেনি। আসলে এই গ্রামে বিয়ে না হওয়ার কারণ সরকারি অবহেলা। এই গ্রামে বিদ্যুৎ, জল, রাস্তার মতো কোনো মৌলিক সুবিধা নেই। এমনকি যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমও এখানে পাওয়া যায় না। মোবাইল ফোনও এই গ্রামে অকেজো হয়ে যায় কারণ এখানে নেটওয়ার্ক নেই। এই গ্রামের মানুষ নিজেরাই রাস্তা তৈরি করে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে কয়েকবার সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু তাদের সাহায্য করার মত কেউই নেই। কয়েক বছর আগে গ্রামবাসীরা নিজেরাই পাহাড় কেটে একটি কাঁচা রাস্তা তৈরি করেছিল, যার সাহায্যে এখন গ্রামে যেতে শুরু করেছে যানবাহন। এমন পরিস্থিতিতে এই শতাব্দীতেও এই গ্রামটি যে কত পিছিয়ে রয়েছে তা নিশ্চয় বলে দেওয়ার দরকার পড়েনা। এই কারণেই এই গ্রামে কেউ তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে চায় না। এখানকার যুবকরা গ্রামে থাকতে চায় না। এখন দেখার বিষয় এই গ্রামের মানুষদের আর কতদিন ব্যাচেলর হয়ে জীবন কাটাতে হবে। এই গ্রামে কোনও পুরুষের বিয়ে হয়না। এমন নয় যে তাঁরা বিয়ে করতে চান না। কিন্তু এই গ্রামের পুরুষদের কোনো মেয়ে বিয়ে করেন না। এই গ্রামে শুধু পুরুষদেরই বাস। পুরো গ্রাম জুড়ে শুধুই পুরুষরা থাকেন। ব্যতিক্রম একটি আছে। ২০১৭ সালে এই গ্রামের এক যুবক বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে এই গ্রামে হাজির হয়েছিলেন। ওই একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়া কিন্তু কারও বিয়ে হয়নি এই গ্রামে।
ঠিক একই রকম পরিস্থিতি উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির একটি গ্রামে। সেখানেও স্থানীয় যুবকেরা বিয়ে করতে পারছেন না। বলা ভাল তাঁদের বিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। লাল চেলি পরা নববধূর পা পড়ে না উঠোনে। বহু দিন হয়ে গেল এই গ্রামে কোনও নতুন বউ এসে দাঁড়ায়নি। বিয়ের সানাই বাজেনি কোনও যুবকের পরিবারে। কিন্তু কেন ওই গ্রামের কোনও যুবকের হাতে কন্যা সম্প্রদান করতে চান না মেয়ের বাবারা! আসল ঘটনার কথা জানলে হতবাক হয়ে যাবে গোটা দেশের মানুষ। জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির গ্রামে বিয়ে না হওয়ার কারণ বিদ্যুৎ। স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরেও ঝাঁসির কাটরা এলাকার পুরাইনা গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছোয়নি। বিদ্যুতের অভাবে এই গ্রাম এখনও অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে। তাই এই গ্রামে কেউ নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চান না। শুধু বিদ্যুতের অভাবে নয়, সেই সঙ্গে এখানে রয়েছে জলের সমস্যাও। বিদ্যুতের অভাবেই এখানে নলবাহিত জল আসে না। নিত্য প্রয়োজনীয় জলটুকু নিয়ে আসতে অনেক দূর যেতে হয় গ্রামের মহিলাদের। কষ্টের শেষ নেই।
সূর্য ডোবার পর এলাকার বাসিন্দারা লণ্ঠন জ্বালিয়েই কাজ সারেন। এদিকে সরকারের তরফ থেকে কেরোসিন দেওয়ার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাতে বিপত্তি বেড়েছে পুরাইনা গ্রামের বাসিন্দাদের। এখন তাঁরা ভোজ্য তেল পুড়িয়ে আলো জ্বালেন। অনেকে ডিজেল দিয়ে বাতি জ্বালাতে বাধ্য হন। স্থানীয় মহিলাদের মধ্যে ক্ষোভ সব থেকে বেশি। তাঁরা দাবি করেন দিনের অর্ধেকটা সময় চলে যায় জল সংগ্রহ করতে। আর বিকেল ৫টার পরই ঘরে নেমে আসে অন্ধকার। তখন প্রায় কোনও কাজই করা যায় না। এদিকে বাইরের দুনিয়া এগিয়ে গিয়েছে অনেকখানি। এই গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনে স্বাভাবিক কাজকর্ম নিয়মিত ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জলের সমস্যায় ভেঙেছে সম্পর্ক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যখনই কোনও ব্যক্তি তাঁর মেয়ের সম্বন্ধ নিয়ে গ্রামে আসেন, তখনই এখানে বিদ্যুৎ ও জলের সমস্যার দিকে তাঁর নজর পড়ে। এমন গ্রামে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হন না কেউ। যে কোনও মানুষ সাফ জানিয়ে দেন, নিজের মেয়েকে এমন গ্রামে পাঠাতে পারবেন না যেখানে বিদ্যুৎ নেই, জল পাওয়া যায় না।