কলকাতা ব্যুরো: পানশালা ৫০ শতাংশ লোক নিয়ে খোলা। অথচ বন্ধ “পাঠশালা”। করোনার প্রথম ঢেউ দেশে আছড়ে পড়ার পর থেকেই এই প্রবণতা বারবার চোখে পড়েছে। হাজারো প্রতিবাদ করেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। “পাঠশালা”র থেকে বরাবরই অগ্রাধিকার পেয়েছে পানশালা। বিগত কয়েকবছর ধরে পঠনপাঠনের জরাজীর্ণ অবস্থা। সব ধাক্কা সামলে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই ধীরে ধীরে খুলেছিল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। কিন্তু তা বেশিদিন দীর্ঘায়িত হলো না। আবারও পানশালার সামনে মুখ থুবড়ে পড়লো “পাঠশালা”র ভবিষ্যৎ। আর এমন সিদ্ধান্তের পর সব মহল থেকেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিভাবকদের দাবি এভাবে বাচ্চাদের ভবিষ্যতকে বারবার কাঠগড়ায় না তোলাই শ্রেয়। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের এমন নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল সাইটেও তীব্র কটাক্ষের ঝড় বইছে।
বর্ষবরণের রেশ এখনও চলছে। গত সপ্তাহের বড়দিন উদযাপন থেকে শুরু করে নতুন বছরের সেলিব্রেশন। এতটুকু দম ফেলার সময় নেই রাজ্যবাসীর। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব এসবের তোয়াক্কা না করেই ডবল ভ্যাকিসিনেশনকে বুকে আঁকড়ে চলছে দেদার সেলিব্রেশন। কয়েকদিন আগেই বড়দিন ও বর্ষবরণ উপলক্ষে পার্ক স্ট্রিটের “সভ্য” চেহারা সামনে এসেছিল। তারপর থেকেই সব মহলে শুরু হয়ে যায় গুঞ্জন। কথা চালাচালি হতে থাকে যে ভাবে বেড়ে চলেছে সংক্রমণ তাতে কি আবারও রাজ্য জুড়ে লকডাউনের পথেই হাঁটতে চলেছে সরকার? তবে শেষ ৫ দিনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে কীভাবে ঝড়ের গতিতে বেড়ে চলেছে দৈনিক সংক্রমণের হার।
২৯ ডিসেম্বর সংক্রমণ ছিল ১০৮৯
৩০ ডিসেম্বর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১২৮
৩১ ডিসেম্বর একলাফে বেড়ে হয় ৩৪৫১
১ জানুয়ারি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১২
২ জানুয়ারি সংক্রমিতের সংখ্যা ৬১৫৩। প্রায় ৭ মাস পর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হলো রবিবার
অবশেষে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়তেই রবিবার একগুচ্ছ বিধি নিষেধ জারি করে দিল নবান্ন। রবিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানিয়েছেন কোন কোন ক্ষেত্র আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ও খোলা রাখা যাবে। কোথায় কেমন নিয়ন্ত্রণ জারি থাকবে তাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের পক্ষে।
নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, পানশালাতে রাত ১০টা পর্যন্ত মদ পরিবেশন করা যাবে। রেস্তরাঁও ৫০ শতাংশ ক্রেতা নিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে শেষ সময় পর্যন্ত পানশালা বা রেস্তরাঁয় কাটানো যাবে না কারণ, রাত ১০টা থেকে নাইট কার্ফু শুরু হয়ে যাওয়ায় সময় থাকতেই আসর গুটিয়ে ফেলতে হবে।
অন্যদিকে যাত্রীসুরক্ষার কথা মাথায় রেখে সোমবার থেকে ফের বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকাতা মেট্রোর টোকেন পরিষেবা। যাত্রীরা কেবলমাত্র স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করেই মেট্রোয় উঠতে পারবেন। রবিবার এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। তবে মেট্রো পরিষেবা এতদিন যেমনভাবে পাওয়া যাচ্ছিল, সোমবার থেকে তাতে কোনও বদল আসছে না। কিন্তু সংক্রমণ যেমন লাগামছাড়াভাবে বাড়তে শুরু করেছে, তাতে সতর্ক মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষও।
মেট্রো রেল আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রতিদিন কলকাতা মেট্রোর টোকেন ব্যবহার করে প্রায় এক লাখ যাত্রী যাতায়াত করতেন। কিন্তু সোমবার থেকে, সেই পরিষেবা ফের বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মূলত যে টোকেনগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাতে বহু ব্যবহারকারী সংস্পর্শ হয়। এই ক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বেশি। আর সেই কারণেই টোকেনগুলির ব্যবহার আপাতত বন্ধ রাখছে কলকাতা মেট্রো।
করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল মেট্রো রেলের টোকেন পরিষেবা। স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করেই যাতায়াত করতে হচ্ছিল। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে, কিছুদিন আগেই কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের তরফে ফের চালু করা হয়েছিল টোকেন পরিষেবা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ নভেম্বর কলকাতা মেট্রোয় ফের টোকেন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। করোনাকালে বন্ধ রাখা হয় টোকেন ব্যবহার। স্মার্ট কার্ডই ছিল মেট্রোয় যাতায়াতের ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা। কিন্তু করোনার বাড়বাড়ন্তের জন্য আবার শুধু মাত্র স্মার্ট কার্ড রয়েছে এমন যাত্রীই মেট্রোয় যাতায়াতের অনুমতি পাবেন।
নতুন নির্দেশিকায় লোকাল ট্রেন আংশিকভাবে বন্ধ করার কথা বলা হলেও, মেট্রো রেল পরিষেবায় কোনো কাটছাঁট করা হচ্ছে না। এতদিন পর্যন্ত যেমন মেট্রো পরিষেবা চালু ছিল, তেমনটাই চালু থাকবে মোট আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে।