কলকাতা ব্যুরো: বিরোধীরা তার নামে বরাবরই স্বজনপোষণের অভিযোগ করলেও, তার ঘনিষ্ঠরা জানে, তিনি একবার কাউকে স্নেহে জায়গা দিলে শত বাধাতেও মাথার উপর থেকে হাত সরান না। বহু ক্ষেত্রে বহু অন্যায় করেও তার ঘনিষ্ঠ বহু নেতা শুধুমাত্র দিদির স্নেহের ছাতার তলায় থাকাতেই পার পেয়ে গিয়েছেন, এমন উদাহরন ভুরিভুরি রয়েছে। সোমবারও যে পাশে থাকার দায়িত্ব থেকে সরলেন না মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল পৌনে নটায় ফিরহাদ হাকিম এর বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়ে তাকে সহ সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের নিজাম প্যালেসে তুলে এনেছে সেই খবর রটেছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই।


তার মাত্র ঘন্টা খানেকের মধ্যে কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সোজা পৌঁছে যান চেতলায় ববির বাড়িতে। সেখানে কিছুক্ষণ থেকেই অতর্কিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সোজা চলে যান নিজাম প্যালেসে সিবিআই দপ্তরে। এখান থেকেই anti-corruption ব্রাঞ্চের অফিসাররা এদিন ভোর রাত থেকে হানা দিয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ববি ওরফে ফিরহাদের বাড়িতে। নিজের মুখ্যমন্ত্রীর পদ বা প্রটোকলের ধার না ধেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোজা উঠে যান ১৫ তলার অফিসে। পড়ে সেখানে দুর্নীতি দমন শাখার ডিআইজির অফিসের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। যে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তার সহকর্মীদের তাকেও সে ভাবেই গ্রেপ্তার করা হোক দলের নেতা হিসেবে, এই দাবি নিয়ে একেবারে বাঘের ঘরে হানা দেন বাংলার বাঘিনী।
অনেকেই যখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার এই যাওয়াটা কতটা আইনি এবং তার পদের মর্যাদা পূর্ণ হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সেই যুক্তিকে পাত্তা না দিয়ে দীর্ঘ ছ ঘন্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসে থেকেছেন নিজাম প্যালেস সিবিআই এর অফিসে। একেবারে বাঘের ঘরে ঢুকে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ছুড়ে দেওয়ার যে চাপ আসলে তিনি নিজাম প্যালেসে বসে থাকার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির উপরে বাড়িয়েছেন, তাতে কাজ যে হয়েছে তাও স্পষ্ট। সিবিআই ধৃতদের আদালতে ফিজিক্যাল হাজির করতে পারেনি।

আর নেত্রী সিবিআই অফিসে বসে থাকায় গোটা রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নেমে পড়েছে তার দল। একদিকে নিজামের সামনে কয়েক হাজার তৃণমূল সমর্থক ওই সময়ের মধ্যে জড়ো হয়ে গিয়েছে। তাতে তার তিন বর্তমান ঘনিষ্ঠ ও এক প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ শোভন সহ কাউকেই ফিজিক্যালি সিবিআই আদালতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়নি তদন্তকারী সংস্থা। এই চাপ বজায় রাখার এদিন সকাল থেকে সিবিআই অফিস নিজে ঘাঁটি গেড়ে বসে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এমনটাই মনে করছেন বর্ষীয়ান পুলিশ অফিসাররা।
তাদের মতে শেষ নয় এখানেই, এর আগে মদন মিত্র কে যখন সারদা মামলায় সিবিআই গ্রেপ্তার করেছিল, তখন তার হয়ে পথে নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী। বরাবর দল বা তার হ্যা এ হ্যা মেলালে তার মতো দিদির স্নেহ পাওয়া নেতা কম আছেন তৃণমূলে।


আবার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানার মাঝ পথে তার বাড়ি পৌঁছে শেষে ধর্নায় বসে পরেও মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রমাণ করে দিয়েছেন, তার জন্যে কেউ হাঁটু জলে নামলে তিনি তাঁর জন্য গলা জলে নামতেও দ্বিধা করেন না। যার প্রমাণ এদিনও গোটা দেশ দেখলো, তিন দলীয় নেতার গ্রেপ্তারের বিরোধিতায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উল্টে হানা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির অফিসে। দীর্ঘ ছ ঘণ্টা সেখানেই সহকর্মীদের প্রতি দায় বদ্ধতায় ধর্না দিলেন তিনি। আর এই বাজারে তার একসময়ের স্নেহের কানন ওরফে শোভন আবার এদিন দিদির স্নেহ পেয়ে সব ছেড়ে দলে ফিরছেন কি না সে টা অবশ্য সময়ই বলবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version