জগন্নাথ সামন্ত
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি বিজরিত কুলটি থানার বেলরুইয়ের জমিদার বাড়ী। ১৯৪০ সালে বেলরুইয়ের জমিদার বাড়ীতে নেতাজীর গোপন পদার্পনের ইতিহাস অজানা রয়ে গেছে ভারতর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাসে।
দিনটা ছিল ১৯৪০ এর ১৬ জুন। সাত সকালেই কুলটি থানার বেলরুইয়ের জমিদার রায়সাহেব নকুলচন্দ্র রায়ের কাছে দূত মারফৎ নেতাজী আগাম পৌঁছে দেন তার আগমন বার্তা। বাড়ীর কয়েকজন ছাড়া নেতাজীর পদার্পন গোপন রাখা হয় সকলের কাছে। দুপুর নাগাদ গাড়ী চড়ে নেতাজী বেলরুইয়ের জমিদার বাড়ী এসে পৌঁছলে, বায়সাহেব তাঁকে সাদর আমন্ত্রনে জমিদার বাড়ীর অন্দরে নিয়ে যান। চলে নেতাজীর সাথে বায়সাহেবের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। ঘন্টা দুয়েক পরে নেতাজী জমিদার বাড়ী ত্যাগ করে পাড়ি দেন তাঁর পূর্ব নির্দিষ্ট গন্তব্যর উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে বায়সাহেব হাতে তুলে দিয়ে যান সোনার বাংলা কটন মিলে বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স পদে রায়সাহেবকে যোগদানের অনুরোধ।নেতাজী ছিলেন ওই সংস্থার চেয়ারম্যান। বলা বাহুল্য, পরবর্তীকালে জমিদার নকুলচন্দ্র রায় নেতাজীর সেই অনুরোধ রক্ষা করেন এবং সোনার বাংলা কটন মিলে বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স পদে যোগ দেন।
রায় পরিবারের প্রবীন সদস্য জমিদার নকুলচন্দ্র রায়ের মধ্যম পুত্র ডাঃ অলোকনাথ রায় জানান, নেতাজী যখন আমাদের বাড়ীতে আসেন তখন আমার বয়স মাত্র তিন ।পরবর্তীকালে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের কাছে শুনেছি কলকাতার স্কটিশচার্চে নেতাজী ছিলেন বাবার সহপাঠী। সেই সময় থেকেই দুজনের সখ্যতা। স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ সংগ্রহে নেতাজীর সাথে বাবার গোপন যোগাযোগ ছিল বলে আমাদের ধারনা। বাবা ছিলেন প্রচার বিমূখ মানুষ। তাই নেতাজীর সাথে বাবার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের বিষয় বস্তু আমরা কখনো জানতে পারিনি। তবে নেতাজীর ব্যাবহৃত চেয়ার ও পত্রখানি আজো সুরক্ষিত আছে আমার জেঠতুতো দাদা অনাদি রায়ের পুত্র অসিত রায়ের কাছে।
নেতাজীর ১২৫ তম জন্ম দিবসে বেলরুইয়ের জমিদার বাড়ীতে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পদার্পন, রায়সাহেব নকুলচন্দ্র রায়কে দেওয়া নেতাজীর চিঠি ও তাঁর ব্যাবহৃত চেয়ার, নিঃসন্দহে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনালোচিত ইতিহাসের নতুন এক আধ্যায়ের সূচনার অপেক্ষায় থাকবে।