মৈনাক শর্মাকরোনা কালে সমস্যার সামনে গোটা পৃথিবী . লক ডাউনের জেরে অর্থনৈতিক ক্ষতির মাসুল গুনছে প্রায় সব দেশই এই মহামারীর থেকে বাঁচতে নতুন করে লক ডাউন আর সম্ভব নোই তাই একমাত্র সম্বল সেই ভ্যাকসিন বা কোরোনার টিকা . তাই করোনা কাল থেকে রক্ষা পেতে টিকার দৌড়ে প্রথম সফল হয় ইংল্যান্ড এর কোভিড শিল্ড ও পরে এতে উত্তীর্ণ হয় ভারতের কোভাক্সিন। শুধু তাই নয়, উন্নত দেশ গুলি তাদের তৈরী টিকা সাহায্যের উদ্দেশে অন্য দেশে পাঠাতেও প্রস্তুত এবং তাতে পিছিয়ে নেই প্রতিবেশী পরায়ণ ভারতও . এমনি এক ভারত প্রতিবেশী নেপাল কে সাহায্যের আশ্বাস দেয় দিল্লি। সম্প্রতি ভারত নেপাল বিষেধ মত্রী বৈঠকে করোনা টিকা চেয়ে সাহায্যের ডাক দেন নেপালের বিদেশ মন্ত্রী প্রদীপ গ্যাবলী। তাঁর সফরের সময় গ্যাবলী ভারতে উত্পাদিত করোনভাইরাস ভ্যাকসিনের ১২ মিলিয়ন ডোজ নিজের দেশে পৌঁছানোর জন্য নয়াদিল্লি থেকে একটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি পাবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চীনের তুলনায় ভারতের টিকার উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে নেপাল প্রধান মন্ত্রী, এমন দাবিও করেন বিদেশ মন্ত্রী প্রদীপ গ্যাবলী।
গত কয়েক বছরে বিনিয়োগের নামে বাড়তে থাকা নেপালে চীনের প্রবাব লক্ষণীয়। এই প্রভাবের জেরে দূরত্ব বাড়তে থাকে ভারতের সাথে। আর ঠিক এই সময়েই কোরোনার টিকার সাহায্য ভারত ও নেপালের কূটনৈতিক সম্পর্কের মেলবন্ধনের আশ্বাস দেখছে অনেকে।.আবার কিছু দিন আগেই নিজের সরকার ভেঙ্গে দেয় প্রধান মন্ত্রী অলি, নেপালে পুনরায় রাজতন্ত্রে দাবিও তোলে জনগন, নির্বাচনের দিনও ঠিক হয়। আর ঠিক এই নির্বাচনের মুখেই ভারত মুখী মনোভাব নেপালের জনগণের মন জয়ের কৌশল বলে মানছেন বিশ্লেষকরা।
ভৌগোলিক দিক ছাড়াও কূটনীতির দিক দিয়ে ভারতকে চাপে ফেলতে অস্ত্র হিসাবে কখনো বাংলাদেশ, কখনো শ্রীলংকা আবার অন্য প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহারের কৌশল করে এসেছে বেজিং। সেক্ষেত্রে বাকি নেই নেপালও। করোনা মোকাবিলায় ব্যার্থতা ও চীনের উস্কানিতে কালাপানি অঞ্চল নিয়ে নেপাল ও ভারতের বিবাদের জড়িয়ে দেশের জনগণ ও নিজের পার্টির নেতাদের সমালোচনার সম্মুখীন হয় কে পি অলি। যার ফলে নিজের পার্টির আস্থা ফিরে পেতে অসফল হয়। তাই নিজের ক্ষমতা বাঁচাতে নেপালের সংসদে সংবিধান সংশোধনের দাবি তোলে প্রধান মন্ত্রী। এই সংশোধনের ফলে নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা চলে যাবে প্রধান মন্ত্রীর কাছে। আর এই প্রস্তাবের ফলেই সরব হয় বিরোধীরা। যার ফলে, সংসদ ভাঙ্গবার আর্জি নিয়ে চাপে কে পি অলি। আর এই বাড়তে থাকা বিরোধের জন্যই এমন পদ্ধক্ষেপ বলে মানছেন অনেকে।
২০১৫ সালের পর থেকেই নেপালে রাজতন্ত্রের বদলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গনতন্তের দাবি করে কমিউনিস্ট পার্টি। যা ২০১৮ সালে লেলিন বাদ ও ম্যাক্সবাদ মতাদর্শীদের নিয়ে নেপালে কমিউনিস্ট পার্টির সরকার ক্ষমতায় আসে। যার কার্যকাল ছিল ২০২২ পর্যন্ত। যদিও ২০১৮ সালে নেপালে রাজনৈতিক পালা বদলের পরোক্ষ কারণ ছিল চীন। কারণ নেপালের রাজতন্ত্র ছিল, ভারত সমর্থিত। তাই ওলির সরকারকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে পরে বেজিং। ভারত ও নেপালের রুটি ও বেটির সম্পর্ক। আর এই সম্পর্কের অনুভূতিই হতে পারে কে পি ওলির নির্বাচনে হারবার কারণও।ভুটান ও নেপালের বেশ কিছু অংশ বিহার ও ভারতের উত্তর পূর্ব সীমানা লাগোয়া। সেক্ষেত্রে নেপালে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে, কালাপানি এলাকা দখলে লাদাখ এর মতো ভবিষৎতে আবারো দিল্লি, বেজিংয়ের বিবাদের কারণ হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যেই লীপুলেখ অঞ্চলে সেনা নেপালের সাথে চীন সেনা মোতায়েন করার অভিযোগ ও সামনে আসে। লিপুলেখ হ’ল উত্তরাখণ্ডের কলাপানি উপত্যকার উপরে অবস্থিত ভারত, নেপাল এবং চীন মধ্যে ত্রি-সংযোগ.জুলাই মাসে প্রায় এক হাজার সেনা পালা নামক অঞ্চলে র কাছে মোতায়েন করা হয়েছিল এবং চীন সেখানে একটি স্থায়ী পোস্ট তৈরি করেছিল।
নেপাল ও ভারতের সম্পর্কের গভীরতা অনেক। কেবল কূটনৈতিক দিকেই নয়, ভৌগোলিক দিক দিয়েও গুরুত্ব পূর্ণ। দিল্লি সেই জন্যই নেপালের সাথে সম্পর্ক আবার গড়তে এইটাই সঠিক সময় হিসেবে বেছে নিয়েছে।২০১৮ র সর্বশেষ নেপাল ভ্রমণ কালে জনকপুর এবং অযোধ্যার মধ্যে একটি বাসের পথকে রামায়ণ সার্কিটের সূচনা করেছিলেন। যার জন্য পবিত্র জনকপুর শহর বিকাশের জন্য ১০০ কোটির প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়