মৈনাক শর্মা

প্রাকৃতিক দূষণ বর্তমানে মানব জীবনের একটি বড় সমস্যা। ইউরোপীয় দেশের শিল্পে অগ্রগতির প্রভাবে বাড়তে থাকে শিল্প। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে পরিবেশ দূষণও। দূষণের ভয়াবহতাকে লক্ষ করে ২০১৬ সালে বিশ্ব প্যারিস চুক্তি হয়। কিন্তু এই চুক্তির প্রভাব কেবল খাতায় কলমেই রয়ে যায়। একদা শিল্প বিপ্লবের সূত্রপাত যেখান থেকে, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপ্লব শুরুও সেই ইংল্যান্ড থেকেই।

পরিবেশ দূষণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে সম্প্রতি পেট্রল ও ডিজেল চালিত গাড়ি বিক্রির উপর নিযেধাজ্ঞা জারির পথে ইংল্যান্ড। ২০৩০ সালের মধ্যে পেট্রল ও ডিজেল গাড়ির বিক্রি বন্ধ করবে বরিস জনসন সরকার। শুধু তাই নয়, পরিবেশকে ক্ষতি না করে গ্রীন ইন্ডাস্ট্রিয়ালের লক্ষে ১২ বিলিয়ন পাউন্ডের ঘোষণাও করে ব্রিটেনের প্রধান মন্ত্রী বরিস জনসন। গ্রীন ইন্ডাস্ট্রিইয়ালের উদ্দেশকে সফল করতেও এই প্রকল্পে জনগণকে উৎসাহ দিতে দু লক্ষ পঞ্চাশ হাজার চাকরির লক্ষ গ্রহণ করে জনসন সরকার। পেট্রল ও ডিজেল গাড়ির বিকল্প হিসাবে দেশের জনগণকে ইলেকট্রিক বাহনের দিকে প্রোৎসাহিত করতে ১.৩ বিলিয়ন পাউন্ডের ঘোষণা করে ইংল্যান্ড সরকার। এর আগেও পরিবেশ দূষণকে গুরুত্ব দেওয়ার লক্ষে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয় লন্ডনে। প্যারিস চুক্তিকে গোটা বিশ্বের কাছে ইংল্যান্ডকে উদাহরণ হিসাবে প্রস্তুত করতে ২০৫০ সালের মধ্যে জিরো পলিউশন এর লক্ষ নেয় জনসন সরকার।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানিজশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সব থেকে কার্বন ডাই অক্সসিড উৎপন্ন কারি দেশ হিসেবে প্রথম আমেরিকা ও দ্বিতীয় চীন। দূষণে পিছিয়ে নেই ভারতও। বিশ্বের ১৬ টি দূষিত শহরের তালিকার মধ্যে রয়েছে ভারতের ১৪ টি শহর। সমীক্ষা অনুযায়ী, উত্তর ভারতের শহরগুলির দূষণের মাত্রা বেশি। যার মধ্যে রাজস্থানের যোধপুর (নং ১৪), গয়া (নং ৪), পাটনা (নং ৫) এবং বিহারের মুজাফফরপুর (নং ৯) রয়েছে। তালিকায় দিল্লি, আগ্রা এবং কানপুরে বায়ু দূষণের মাত্রা খুব বেশি রয়েছে। ভারতের রাজধানী দিল্লির বাতাস সব থেকে দূষিত হিসাবে আলোচিত হয় এই সমীক্ষায়। দিল্লির আশেপাশের রাজ্যে যেমন হরিয়ানা, পাঞ্জাবের কৃষকদের থেকে যাওয়া বাড়তি ফসল উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাবে সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই। ফলে ফসল পোড়ানো হচ্ছে। এতেই রাজধানীর বাতাস দূষিত হচ্ছে।

বায়ু দূষণের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রভাব পড়ছে। যার ফলে বাড়ছে পৃথিবীর উষ্ণতা। জলবায়ু পরিবর্তন সম্ভবত সেই প্রক্রিয়া, যা আগামী বছরগুলিতে আর্কটিকের এক বৃহত্তম প্রভাব ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বব্যাপী এক ডিগ্রি তাপমাত্রা পরিবর্তন আর্কটিকের তিনগুণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি করবে। এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, বিশ্বের দেশগুলি CO2 নির্গমনে কোনও ছাড় না দিলে, বেরেন্টস সাগর 2050 সালের মধ্যে বরফ মুক্ত হবে। যার অর্থ পৃথিবীর একাংশ ভূভাগ সমুদ্রে তলিয়ে যাবে।

বায়ু দূষণ সীমানার সীমারেখা মানে না। বায়ুর মানের চাহিদা উন্নত করা সব স্তরে টেকসই এবং সমন্বিত সরকারী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন বিশ্বের সমস্ত সরকারের। শুদ্ধ বায়ু নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সেই অধিকারকে সুরক্ষিত করতে আইনের দাবি সরকারকে জানাতে হবে বার বার।
এর আগেও ১৯৪০ এর দশকে ফিরে দূষণবিরোধী আইন ক্যালিফোর্নিয়াতে কার্যকর করে ছিল আমেরিকা। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়া দেশ, যেমন ভারত, বাংলাদেশর মতো বিকাশ গামী দেশগুলি উন্নত দেশ, যেমন আমেরিকা, চিন ও ইংলন্ডের মতো দেশগুলির তুলনায় কতটা কার্বন মুক্ত বাণিজ্যে সক্ষম হবে তা নিয়ে সংশয় আছে পরিবেশবিদদের।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version