কলকাতা ব্যুরো: দীর্ঘদিন পর একই অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী। যদিও কোভিড আবহে এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি উপস্থিত দু’জনই। রাজ্যে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চেই স্বাস্থ্য পরিষেবায় রাজ্যের একাধিক দিক তথ্য সহকারে তুলে ধরে পরোক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিউটাউনে যে ক্যাম্পাসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী, তা অনেক আগেই চালু করা হয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে রাজ্যে যাতে বণ্টন করা হয়, এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সেই দাবিও তুললেন মমতা। ফলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিছকই এক অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ রইল না। কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বের কাঁটা রয়ে গেল তাতে।
শুক্রবার দুপুরে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধনে এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান পূর্বপরিকল্পিত ছিল। করোনা আবহে কেউই সশরীরে হাজির হয়ে ক্য়াম্পাসের ফিতে কাটার ঝুঁকি নেননি। ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন এ রাজ্যের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী – নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকার, ছিলেন সাংসদ জন বার্লা, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দীর্ঘদিন পর কেন্দ্র-রাজ্য়ের যৌথ প্রকল্পের সূচনায় প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির দিকে নজর ছিল সব মহলের। অনুষ্ঠান শুরুর পর মুখ্যমন্ত্রীকে বক্তব্য রাখার অনুরোধ জানান সঞ্চালক। দেখা যায়, গোড়া থেকেই তথ্য-পরিসংখ্য়ানের দিকে জোর দিলেন মমতা।
অন্যদিকে বাংলার জন্য কল্পতরু কেন্দ্র, তথ্য দিয়ে পাল্টা তা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাকে ইতিমধ্যে বিনামূল্যে প্রায় ১১ কোটি করোনা টিকা দিয়েছে কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, তাঁর আরও দাবি, করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য রাজ্যকে অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং কনসেনট্রেটর দিয়েছে মোদী সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী পরিস্থিতিতে বাংলাকে ৯ হাজারের বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার, দেড় হাজার ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন প্ল্যান্ট নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এদিনের মঞ্চ থেকে ডাক্তারির আসন বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জবাবে মোদী জানান, ২০১৪ সালের আগে ডাক্তারির স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ৯০ হাজারে কম আসন ছিল। আর গত সাত বছরে এক্ষেত্রে ৬০ হাজার আসন বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্র সরকার।
এরপরই তাঁর চ্যালেঞ্জ, গত সত্তর বছরে দেশে যত চিকিৎসক তৈরি হয়েছে, আগামী ১০ বছরে তত সংখ্যক ডাক্তার পাবে দেশ। তিনি জানিয়েছেন, দেশে এইমসের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প. কেন্দ্রের জনঔষধি কেন্দ্রের সাফল্যের খতিয়ানও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানান, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পান ক্যানসার রোগীরাও। ব্যতিক্রম নয় বাংলা-ও। পাশাপাশি, টিকাকরণের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির ২৫ শতাংশ খরচ দিয়েছে রাজ্য। ১০ একর জমির উপর তৈরি ৪৬০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রাজ্য়ের খরচ ১৩৪ কোটি। কেন্দ্র খরচ করেছে প্রায় ৫০০ কোটি। প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যের ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন, করোনা কালে এই ক্যাম্পাসে কাজ শুরু করা খুবই প্রয়োজন ছিল সেইসময়। তাই আগেই তার উদ্বোধন করে চালু করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার।
পাশাপাশি রাজ্যে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়েও তিনি কার্যত বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁর কথায়, আপনারা বুস্টার ডোজ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, খুব ভাল। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ না সম্পূর্ণ হলে কীভাবে বুস্টার ডোজ দেব। আগে রাজ্য পর্যাপ্ত দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন পাক, ১০০ শতাংশের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হোক, তারপর বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজ শুরু হবে।
এছাড়া স্বাস্থ্যসাথী-সহ রাজ্যের একাধিক স্বাস্থ্যপ্রকল্পের কথা উল্লেখ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথা খুব মন দিয়েই শুনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে জন পরিষেবার অনুষ্ঠানে কেন কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত ছায়া ফেলল, সেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহলে।