কলকাতা ব্যুরো: হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাজ্যে ভোট-পরবর্তী নৃশংস হিংসার মামলার তদন্তে প্রস্তুতি শুরু করলো সিবিআই। এই তদন্তের জন্য পৃথক পৃথকভাবে চারটি দল তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। একইসঙ্গে শুক্রবার ই-মেইল করে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর কাছে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে যাবতীয় কেস ডায়েরি চাওয়া হয়েছে। এদিন দুপুরেই দিল্লি থেকে সিবিআই ডিরেক্টর সহ শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগদান করেন কলকাতায় সংস্থার শীর্ষ অফিসাররা। প্রাথমিকভাবে কিভাবে তদন্ত এগোবে তার রূপরেখা তদন্তের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের তিন আইপিএস এর নেতৃত্বে সিট গঠন করে দিলেও, সেই সিট এখনো কাজকর্ম শুরু করেছে বলে খবর নেই।
সিবিআই সূত্রে খবর রাজ্যের থেকে যে সমস্ত নথি চাওয়া হয়েছে তা হাতে এলেই রুজু হবে এফআইআর। প্রতিটি অভিযোগে আলাদা আলাদা ভাবে রুজু হবে মামলা।
রাজ্য সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, খুন ও ধর্ষণের অভিযোগের মামলা ৪১ টি হয়েছে। যদিও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের সঙ্গে সেই সেই সংখ্যার কিছুটা ফারাক আছে। কলকাতা হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় নির্দেশে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে, যদি ভোট-পরবর্তী সময় খুন বা ধর্ষণের মতো ঘটনা না ঘটে থাকে, সে ক্ষেত্রে সেই মামলাগুলি স্থানীয় থানার কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। থানা পৃথকভাবে তার তদন্ত চালাবে। যদিও ভোট-পরবর্তী সময়ে আদপে কতগুলি ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠিত কমিটি তাদের রিপোর্টে যে সংখ্যাতত্ত্ব দিয়েছে, তার অনেকগুলো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে হাইকোর্টে অভিযোগ করে রাজ্য। ফলে আদবে সিবিআই তদন্ত সেই অভিযোগগুলির হাল কি হয় তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটি একটি চার্ট তৈরি করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের নেতাদের নাম লিখে তা দুষ্কৃতীদের হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যা নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে রাজ্যের। ইতিমধ্যেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে মামলায় যুক্ত হতে চাইলেও, তা খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্টে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। সিবিআই তদন্তে কমিটির রিপোর্টের এই অংশটি নিয়েও জল ঘোলা হবে বলে আশঙ্কা বর্ষীয়ান অফিসারদের। এছাড়া বহু ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে মামলার শুনানিতে। ফলে মামলা সংখ্যা আরো বাডতে পারে বলে মনে করছে সিবিআই।
রাজ্যে এই তদন্তের জন্য এখনো পর্যন্ত সিবিআই চারটি বিশেষ টিম বা সিট গঠন করেছে।
প্রত্যেক টিমের মাথায় একজন করে জয়েন্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার অফিসার থাকবেন।
আইপিএস অনুরাগ সিং, দিল্লি, আইপিএস রামনিশ গীর, ভোপাল, আইপিএস সম্পদ মিনা, লকনউ ও
আইপিএস বিনীত বিনায়ক, চন্ডীগড় – এই চারজনের ঘাড়ে থাকছে রাজ্যের সাম্প্রতিক সবচেয়ে স্পর্শকাতর মামলাগুলোর দায়িত্ব।
প্রতি দলে একজন করে ডিআইজি থাকবেন। মোট ১৫ জন এসপি। দু’জন অ্যাডিশনাল এসপি থাকবেন।
চারটি টিমে এসপি ও এএসপি মিলিয়ে এক একটি টিমে থাকবেন চার থেকে পাঁচজন। সব মিলিয়ে ২৫ জনের সুপার ভাইজারি টিম তৈরি হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এছাড়া বিভিন্ন রাজ্যের ডিএসপি, ইনস্পেকটর, সাব ইনস্পেক্টররা থাকবেন তদন্তকারী দলে। থাকবেন মহিলা অফিসাররাও।
এদিনের বৈঠকে কোন জেলায় কত মামলা রয়েছে, কী ভাবে তদন্ত হবে সে সব বিষয়ে দুপুরে কলকাতায় কলকাতায় বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সিবিআই সূত্রে খবর।