মৈনাক শর্মা
বিজ্ঞানের আধুনিকতম সৃষ্টি মাইক্রোওয়েভ, যার ব্যবহারে ঠান্ডা খাবারকে খুব সহজেও কম সময়ে গরম করা যায়, এছাড়া কেক তৈরী শিল্পেও এর ব্যবহার দেখা যায়, কিন্তু বর্তমানে সেই মাইক্রোওয়েভ শত্রু পক্ষের সৈন্যের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। হ্যা, ঠিক শুনেছেন এমনি এক চাঞ্চল্য অভিযোগ উঠেছে। যদিও পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয় গোটা খবরটি এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।কিন্তু কি এই নয়া অস্ত্র তা জানার কৌতুহল আছে অনেকেরই।
গত কয়েক মাস ধরে চলে আশা ভারত ও চিনের সীমানা বিবাদ কখনো যুদ্ধের পরিস্থিতি, কখনো আবার দীর্ঘ স্বাভাবিক স্থিতাবস্থা বজায় রেখে চলেছে। ঠিক এই সময় লাদাখ সীমান্তের বিতর্কিত এলাকা প্যাংগং ঝিলের দক্ষিণ অংশে নিরাপত্তায় থাকা ভারতীয় সেনার উপর চিন সেনা মাইক্রো ওয়েভ আক্রমণ করেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। বেজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাকিত সম্পর্কের অধ্যাপক জীন ক্যানরং এমন জানিয়েছেন বলে খবর ছড়ায়। ব্রিটেনে প্রকাশিত হওয়া টাইমস পত্রিকায় অধ্যাপক জীন দাবি করেন, প্যাংগং ঝিলের দক্ষিণ অংশ ভারতীয় সেনার দখল থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য এমন করে কিন সৈন্য। কারণ ভারত, চিনের সীমানা চুক্তি অনুযায়ী, সীমান্তে কোনো অস্ত্র, বিশেষ করে রাইফেল ও বন্দুক নিয়ে টহল দেওয়া যাবে না। তাছাড়া ভারতীয় সেনাও ওই এলাকা ছাড়তে নারাজ। এই অবস্থায় তাদের অতি সহজে এলাকা থেকে সরানোর জন্যই এমন উপায় বের করে পি এল এ। জিনের তথ্য অনুযায়ী, মাইক্রো ওয়েভ অস্ত্র আক্রমণের ১৫ মিনিটের মধ্যেই ভারতীয় জওয়ানরা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে ও বমি করতে থাকে। এই সম্পূর্ণ তথ্য নিয়ে চীনের তরফে কোনো জবাব না আসলেও টুইটের মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া সমস্ত খবরই ভুয়ো বলে জল্পনার অবসান ঘটায় ভারতীয় সেনা।
তথাকথিত পরমাণু অস্ত্র সম্পর্কে এখন কম বেশি সকলেরই একটা ধারণা আছে। কিন্তু বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে উৎপন্ন হওয়া মাইক্রো ওয়েভ অস্ত্র কতটা বাস্তব সম্মত প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র।
কী এই অস্ত্র?
মাইক্রোওয়েভ হল বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বিকিরণের একটি রূপ। সূর্যের তাপের মতো এটিও দ্রুত গতিতে উত্তাপে সাহায্য করে। ঠিক রান্না করা খাবার গরমের মতন, লেজার আলোর মাধ্যমে উত্তাপ ছড়ায়। মাইক্রো ওয়েভ দ্বারা ব্যবহৃত অস্ত্রকে ডাইরেক্ট এনারজি উইপন (DEW ) বলা হয়। যা মিসাইল ও অপটিক্যাল ডিভাইসে ব্যবহার হয়।
কাদের হাতে আছে?EN . PEOPLE .CN চিনা ওয়েব পোর্টালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকেই চিন মাইক্রো ওয়েভ রাডার প্রযুক্তির উপর কাজ করছিলো। এই প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার সুরনামেদ সু মতে, মাইক্রোওয়েভ একটিভ ডেনিয়েল সিস্টেম প্রয়োগের মাধ্যমে প্রায় দুই সেকেন্ডের মধ্যেই ১৩০ ডিগ্রি ফরেনহাইড ত্বকের উষ্ণতা বাড়াতে সক্ষম। যা মানুষের পক্ষে সহ্য করা মুশকিল। কারণ মানব দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতা ৯৮ ডিগ্রি ফরেনহাইড। অধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বমি, চোখের ক্ষতি এবং মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারে যে কেউই।চিন ২০১৪ সালে সফল ভাবে মাইক্রোওয়েভ একটিভ ডেনিয়েল সিস্টেমের পরীক্ষা মূলক ব্যবহার করে। যা নাম পলি ডাবলু বি ১ ( POLY WB 1 )। চিনের তৈরী পলি ডাবলু বি ১ প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ওই তরঙ্গর বিস্তার ঘটাতে সক্ষম।পিছিয়ে নেই আমেরিকাও। মার্কিন এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি তৈরী করে একটিভ ডেনাইল সিস্টেম। যা মূলত ব্যবহার হয় দাঙ্গা বা পথ অবরোধে জনগণকে সরাতে। কিন্তু মাইক্রো ওয়েভ অস্ত্র হিসাবে প্রয়োগ কতটা প্রাণ ঘাতি, তা এখনো পরিষ্কার নয়, বিজ্ঞানীদের কাছে।
লাদাখে চিনের মাইক্রো ওয়েভ আক্ক্রমনের বিতর্ক এখনকার মতো সমাপ্ত হলেও, ভবিষ্যতে এর ব্যবহার হবে না, কে বলতে পারে! সেক্ষত্রে কতটা প্রস্তুত দিল্লি প্রশ্ন বিশ্ব রাজনৈতিক মহলে?. এর আগেও হংকং এ চিনের বিপক্ষে বিরোধ থামাতে, মাইক্রো ওয়েভ এর ব্যবহার করা হয় বলে সন্দেহ অনেকের। সেক্ষেত্রে সীমান্তে চিনের আগ্রাসন যে ভাবে বাড়ছে তাতে এলাকা দখলের প্রশ্নে এগিয়ে যাবে চিন।