কলকাতা ব্যুরো: এতদিন কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস রক্ষার দায়িত্বে ছিল তারা। কিন্তু আফগানিস্তানে এখন অশান্তির সময়। তাই দূতাবাসের অনান্য কর্মীদের মতো তাদেরও ফিরিয়ে আনলো ভারতীয় বায়ুসেনা। ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশে কর্মরত তিনটি স্নিফার ডগ মায়া, ববি এবং রুবিকে সম্প্রতি এয়ারফোর্সের সি-১৭ গ্লোবমাস্টার কার্গো বিমানে গুজরাতের জামনগরে ফেরত আনা হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এই- মায়া, ববি ও রুবি? জানা গিয়েছে, গত তিন বছর ধরে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের বম্ব স্কোয়াডে কর্তব্যরত ছিল তারা। ৫-৬ বছর বয়সী এই কুকুরগুলি যে কোনও গন্ধ শুঁকে বিপদ থেকে সাবধান করতে পারতো। আইটিবিপি জানিয়েছে, তিনটি কুকুর অত্যন্ত সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব এবং সততার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেছে কাবুলে। জানা গিয়েছে, কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসেরই নয়, বরং গন্ধ শুঁকে বোমা উদ্ধার করে বহু আফগান স্থানীয় বাসিন্দাদেরও প্রাণ বাঁচিয়েছে তিনজনই। তাঁদের দায়িত্বে থাকা হেড কনস্টেবল কিষাণ কুমার, বীজেন্দ্র সিং এবং অতুল কুমারের কাজকেও কুর্নিশ জানিয়েছে আইটিবিপি।

এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দেশে ফিরতে পেরে ওরা খুব খুশি। এখন চেনা পরিসরে, চেনা গন্ধ-দৃশ্য এবং শব্দ শুনে রীতিমতো উৎফুল্ল এই সারমেয়রা। তিনি আরও জানিয়েছেন, ওরা অসাধারণ কাজ করেছে আমাদের বাহিনীর জন্য। ওদের কাজে আমরা গর্বিত। নিজেদের সেরাটা দিয়ে আরও কাজ করবে ওরা, সেটাই আশা রাখি।

মিষ্টি চেহারার মায়া একটি ফিমেল ল্যাবরেডর। চকচকে কালো, ভয় ধরিয়ে দেওয়া চেহারার রুবি একটি ফিমেল বেলজিয়ান ম্যালিনয়। অন্যদিকে বড়সড় চেহারার ববি একটি মেল ডোবারম্যান। তিনজনেরই বয়স ৫-৭ বছর। কাবুলে ‘জিরো এরর’ কর্তব্য পালন করেছে ওরা।

উল্লেখ্য, বিস্ফোরক বোঝাই যানবাহনের ব্যবহার জঙ্গিদের কাছে খুবই সাধারণ কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে আইটিবিপির ক্যানাইন উইং কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসকে সুরক্ষিত করেছে। এই তিন নায়ক, K9, দূতাবাসে আসা রেশন এবং সরবরাহ শুঁকে দেখত। দূতাবাসের নির্মাণকাজ চলার সময় তারা কমপ্লেক্সে যাতে কোনও বিস্ফোরক প্রবেশ না করে তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। এই সময়ের মধ্যে তারা অনেক আইইডি শনাক্ত করেছে এবং শুধু ভারতীয় কূটনীতিকদেরই নয়, দূতাবাসে কর্মরত স্থানীয় আফগান নাগরিকদেরও জীবন সুরক্ষিত করেছে।

দূতাবাস কর্মীরা জানিয়েছেন, কাবুলে বিভিন্ন ঘটনার সময়েই প্রথম রেসপন্ডারদের টিমে ছিল এই তিনজন। কম্যান্ডোদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সুরক্ষার কাজে ডিপ্লয় করা হয়েছে ওদের। দূতাবাসে প্রবেশের আগে প্রতিটি ব্যাগ, ব্যক্তি, গাড়ি শুঁকে দেখত তারা। তবেই মিলত প্রবেশের অনুমতি।

এই প্রক্রিয়ায় একাধিকবার IED-র খোঁজও দিয়েছে মায়ারা। আর তার ফলে প্রাণ রক্ষা হয়েছে দূতাবাস কর্মীদের। আর সেই কারণেই ‘ওদের যেন কোনওমতেই আফগানিস্তানে ফেলে আসা না হয়,’ নির্দেশ দিয়েছিলেন দূতাবাসের বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল এস এস দেশওয়াল।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর দ্বিতীয় উড়ানের খবর পেতেই তাই আগে ওদের ফেরার বিষয়টা নিশ্চিত করা হয়। এরপর সেখান থেকে তাদের দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইন্দো-তিবেতিয়ান বর্ডার পুলিশের বিশেষ কেনেলে তাদের রাখা হয়েছে।

কেনেলের এক আধিকারিক জানালেন, আপাতত কয়েক সপ্তাহ ওদের সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেওয়া হবে। এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় দিতে হবে। তারপরে ছত্তিশগড়ে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় বাহিনীর সঙ্গে কাজ করতে যাবে ওরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version