আমরণ অনশন প্রত্যাহারের পাঁচ দিনের মাথায় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্টের সদস্যদের আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ছিল গণকনভেশন । সেই কনভেনশনে উঠে এল ‘থ্রেট কালচার’ প্রসঙ্গ। কয়েক দিনের নীরবতার পর আবার সক্রিয়তা। আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা চূড়ান্ত করতে গণকনভেনশনের ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অন্যদিকে, পাল্টা একটি সংগঠনের সূচনা করেছে জুনিয়র ডাক্তারদের অন্য একটি অংশ। শুক্রবার বেশি রাতে গঠিত হওয়া সংগঠনের নাম দেওয়া হয়েছে, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন।

গত সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের পর ধর্মতলার অনশনমঞ্চে ফিরে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা বেশ কিছু ক্ষণ আলোচনার পর ১৭ দিনের অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আন্দোলনকারীরা জানান, রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের কথায় নয়, নির্যাতিতার মা-বাবার অনুরোধে এবং রাজ্যের মানুষের কথা ভেবে আমরণ অনশন এখানেই শেষ হলেও আন্দোলন থামবে না। সে দিনই জানিয়ে দেওয়া হয় শনিবারের গণকনভেনশনের কথা। আরজি কর মেডিক্যালে আয়োজিত ওই মঞ্চ থেকেই আন্দোলনকারী জুনিয়র জাক্তারেরা তাঁদের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন বলে জানান।

অন্য দিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের আর একটি অংশ একটি নতুন সংগঠন তৈরি করেছে, তাতে দু’জনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন চিকিৎসক শ্রীশ চক্রবর্তী এবং প্রণয় মাইতি। সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনের নামে জুনিয়র ডাক্তারদের একটি অংশ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অরাজকতা তৈরি করতে চাইছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পাল্টা সংগঠন গড়ে সত্যিটা মানুষের কাছে তুলে ধরাই ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন-এর লক্ষ্য। ঘটনাচক্রে, সেই সূচনার তিন ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে একটি ছবি। ওই ছবিতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠনের আহ্বায়ক শ্রীশ চক্রবর্তীকে। সন্দীপ, শ্রীশ ছাড়াও ছবিতে রয়েছেন ‘থ্রেট কালচার’-এ অন্যতম অভিযুক্ত অভীক দেকে।

অনশন, মহামিছিল, মহাসমাবেশ, দ্রোহের কার্নিভাল, দ্রোহের সংস্কৃতির পর গণ-কনভেনশনের ডাক দেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। শনিবার দুপুর ৩টেয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অডিটোরিয়ামে এই কর্মসূচি পালিত হয়। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর, রাতে ধর্মতলার মঞ্চ থেকে অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ১৭ দিন পর অনশন তুললেও, ন্যায়বিচার-সহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও শোনা যায় তাঁদের মুখে। ‘আমরণ অনশন’ প্রত্যাহার করার পরেই এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়ানোর সংকল্প নেয় জুনিয়র ডাক্তারদের। শনিবার দুপুরে আরজি করে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই সংগঠনের তরফে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়, লড়াই থেকে কোনওভাবেই পিছিয়ে যাবেন না তাঁরা।

এদিন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তাদের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটের কথা উল্লেখ করে বলেন, কেন শুধুমাত্র সঞ্জয় রায়কেই দোষী প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে? তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাঁচানোর জন্য রাজ্য প্রশাসন কেন উঠেপড়ে লেগেছে? এর পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে, কেন এমন নারকীয় ঘটনা ঘটল তা জানতে চাই। অনিকেত উপস্থিত দর্শকদের মনে করিয়ে দেন, ‘আমরা একসঙ্গে এতটা পথ হেঁটেছি। আজ এখানে সবার মতামত খুব জরুরি। সবার কথা শুনতেই এখানে এসেছি।’পাশাপাশি তিনি সুপ্রিম কোর্টের শুনানির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘শীর্ষ আদালতের উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কিন্তু আমরা শুনতে পাই, সেখানে আমাদের কর্মবিরতি নিয়েই আলোচনা চলছে। নির্যাতিতার সুবিচারের দাবি পিছনে থেকে যাচ্ছে।’

জুনিয়র ডাক্তার কিঞ্জল নন্দ বলেন, চার বছর ধরে আরজি করে যে নারকীয়, অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। গণতান্ত্রিক কোনও পরিবেশ ছিল না। আজকের অনুষ্ঠানে যে সমস্ত প্রাক্তনীরা এসেছেন সবাই এটা জানেন। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। আমরা সুবিচারের দাবিতে যা করার সবটাই করব। কিঞ্জলের কথায় উঠে আসে, প্রতিটি জায়গায় আমাদের কর্মসূচিতে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। কল্যাণীতেও অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। এদিন সেখানেও কনভেনশনের ডাক দিয়েছিল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টর্স সংগঠন। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে কলেজ কর্তৃপক্ষর তরফে উদ্যোক্তাদের জানানো হয়, কনভেনশনের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার অভিযোগ তোলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নবান্নের মিটিংয়ে বলছেন, আমরা নাকি উৎসবে বাধা দিয়েছি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আমরা উৎসবে কোনওভাবেই বাধা দিইনি। আমরা শুধু বলেছি প্রতিবাদের ভাষা ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের কাছে উৎসব। আমরা উৎসবের মঞ্চ হিসাবে ধর্মতলাকেই বেছে নিয়েছিলাম। তাই সুবিচারের দাবি থেকে নজর সরানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’তাঁর আরও অভিযোগ, ‘থ্রেট কালচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল যারা, নবান্ন সভাঘরে আমরা যাদের নটোরিয়াস ক্রিমিনাল বলেছিলাম, শুধু আরজি কর নয় প্রতিটি কলেজে তারা সিন্ডিকেট চালায়, তারা প্রেস ক্লাবে নতুন সংগঠন করেছে।’