কলকাতা ব্যুরো: সোমবার রাতে আচমকাই যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্ব। প্রায় দীর্ঘ সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জনপ্রিয় তিনটি সোশ্যাল মেসেজিং সাইট ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রাম। আর এই সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকার প্রভাব পড়লো মার্ক জুকারবার্গের সম্পত্তিতেও। এই কয়েকঘণ্টায় প্রায় সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হল ফেসবুকের অন্যতম মালিকের। পড়ে গিয়েছে ফেসবুকের শেয়ার মূল্যও।
সোমবার ভারতীয় সময় রাত পৌনে ন’টা নাগাদ আচমকাই কাজ করা বন্ধ করে দেয় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রাম। ইউজাররা অনেকেই সোশ্যাল সাইট টুইটারে এই প্রসঙ্গে টুইট করতে থাকেন। দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে একইরকম অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। এরপরই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রামের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়। জানানো হয়, পরিষেবা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে দ্রুত। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা ঠিক করতে দীর্ঘ সাত ঘণ্টা সময় কেটে যায়। মঙ্গলবার ভারতীয় সময় ভোর চারটে নাগাদ ফের তিনটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
যদিও কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা ফেসবুকের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। তবে অন্তর্বর্তী নাশকতা কিংবা সাইবার হামলার ঘটনাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে এই ঘটনায় নিঃসন্দেহে বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মার্ক জুকারবার্গ। মুহূর্তে ফেসবুকের শেয়ারের দাম অনেকটাই কমে যায়। এমনকী ব্যক্তিগতভাবে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিও হয় তাঁর। এই পরিস্থিতিতে ইউজারদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে ক্ষমাও চেয়ে নেন মার্ক জুকারবার্গ।
এদিকে, এই ঘটনার পর থেকেই টুইটারে তিনটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিয়ে একের পর এক মিম পোস্ট করতে থাকেন ইউজাররা। কখনও মার্ক জুকারবার্গকে নিয়ে তো কখনও টেলিগ্রাম নিয়ে মিম পোস্ট করা হয়।
মার্ক জুকারবার্গ এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে একটি টুইট করেছেন। তিনি সেখানে জানিয়েছেন যে, ‘‘ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়্যাটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জার ঠিকঠাক কাজ করতে শুরু করেছে৷ এই পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় দুঃখিত ৷ আমি জানি আপনারা আপনাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে আমাদের উপর কতটা ভরসা করেন।’’
টুইট করে ১০০ শতাংশ চালু হওয়ার কথা জানিয়েছে হোয়্যাটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষও। টুইটে জানানো হয়েছে, আমরা ফিরেছি এবং ১০০ শতাংশ সচল হয়েছি ৷ সারা দুনিয়ায় প্রত্যেককে তাঁদের ধৈর্যের জন্য ধন্যবাদ ৷ হোয়্যাটসঅ্যাপকে সক্রিয় করতে আমাদের দল কঠিন পরিশ্রম করেছে ৷ আমরা সত্যিই আপনাদের প্রশংসা করছি ৷ মানুষ এবং সংস্থাগুলি প্রতিদিন আমাদের অ্যাপগুলির উপর কতটা ভরসা করেন, তার জন্য আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ ৷
একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ১৭ লক্ষেরও বেশি গ্রাহক এনিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে ৷ যার মধ্যে শুধুমাত্র জার্মানিতেই ১৩ লক্ষ এবং নেদারল্যান্ডে ৯ লক্ষ ১৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন ৷
পরিষেবা চালু হওয়া নিয়ে ফেসবুকও তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি দিয়েছে ৷ সেখানে জানানো হয়েছে, আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের দল জানতে পেরেছে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক আর আমাদের ডেটা সেন্টারগুলির মধ্যে সমন্বয় রাখতে মেরুদণ্ডের মতো কাজ করে ব্যাকবোন রাউটার ৷ এই রাউটারের পরিকাঠামোয় কিছু পরিবর্তনের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ৷ নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বিঘ্নিত হওয়ায় ডেটা সেন্টারের সঙ্গে সংযোগ ঠিকমতো করা যায়নি, যার ফলে আমাদের পরিষেবা থমকে গিয়েছিল ৷
এখন ফেসবুক আবার অনলাইনে ফিরে এসেছে জানিয়ে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নিয়মিত অপারেশনে ফেরাবার জন্য জোরদার কাজ করছি আমরা ৷ আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে, পরিকাঠামোগত ভুল পরিবর্তন এর মূল কারণ। ফেসবুকের প্রধান প্রযুক্তি আধিকারিক মাইক স্ক্রোয়েফার টুইট করে জানিয়েছেন, “ফেসবুক পরিবষেবা ফিরে আসছে ৷ ১০০ শতাংশ কাজ করতে হয়তো আর কিছুটা সময় লাগতে পারে ৷ প্রত্যেক ছোট, বড় ব্যবসায়ী, পরিবার এবং যে সব মানুষ আমাদের উপর নির্ভর করেন, তাঁদের প্রত্যেককে জানাচ্ছি, আমি দুঃখিত ৷”