কলকাতা ব্যুরো: গত সপ্তাহ দুয়েকে পরপর চারটি ঘটনায় ফের জঙ্গল মহলে মাওবাদীদের আনাগোনার প্রমাণ আরো স্পষ্ট হলো। বেলপাহাড়িকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে। রাজ্য পুলিশ সরাসরি এখনো এসব ব্যাপারে মুখ না খুললেও উদ্বেগ বেড়েছে তা স্পষ্ট, শনিবার সকালে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের ঝাড়গ্রামে বৈঠকে।
এদিন সকালে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার, আইজি এবং ডিআইজিরা উপস্থিত হয়ছিলেন পুলিশ সুপারের অফিসে। যদিও দু ঘন্টা চলা ওই বৈঠক সম্পর্কে কোন পুলিশ কর্তা মুখ খুলতে চাননি। তবে এই বৈঠক সাম্প্রতিক জঙ্গলমহলে মাওবাদী আনাগোনার যে পরিণতি পুলিশের নিচু তলার অফিসারদের আচরণে তা স্পষ্ট। ঝাড়গ্রাম পুলিশ সুপার অফিসে বৈঠক সেরে রাজ্য পুলিশের ডিজি চলে যান ঢাঙ্গী কুসুম এলাকায়। যেখানে পর্যটকরা মাওবাদীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন ডিজি সহ রাজ্য পুলিশের শীর্ষ অফিসাররা।
স্বাধীনতা দিবস বয়কটের ডাক দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি বেলপাহাড়ি বাসস্ট্যান্ডে মাওবাদীদের নাম ব্যবহার করে বেশ কিছু পোস্টার পড়েছিল। তারপরেই বেলপাহাড়ির পচাপানির ব্যবসায়ীদের কাছে তোলা চাওয়া এবং তাকে কেন্দ্র করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠে আসে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে শুক্রবার বেলপাহাড়ি ঢা লুঙ্গি কুসুম এলাকায় বেড়াতে যাওয়া ট্যুরিস্টদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় ফের মাওবাদী উপদ্রব বাঁড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, ওইদিন দুপুর নাগাদ খড়গপুর থেকে বেশ কয়েকজন পর্যটক বেলপাহাড়ীর ঢাঙ্গীকুসুম এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। ঝারখান্ড সীমান্তের ধলভূম গড়ের মধ্যে থাকা ঢাঙ্গীকুসুম ঝর্ণা ঝরনার আশপাশে যখন তারা মোবাইলে নিজেদের ছবি তুলছিলেন, সে সময় ঘটে যায় এক ঘটনা।
হঠাৎ করেই মুখে গামছা বাঁধা সাতজন তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। দুজনের কাঁধে লংরেন্জ রাইফেল ছিল। তিনজন মহিলা ছিল ওই দলে। তারা ওই পর্যটকদের সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার না করলে ও তাদের মোবাইল ফোন গুলি নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। যদিও খড়্গপুরে ফিরে তারা প্রথমে থানায় অভিযোগ জানালেও পরে তা তুলে নেন বলে দাবি। রাজ্য পুলিশ অবশ্য গোটা ঘটনায় কোন মন্তব্য করতে চায়নি।
তবে বেলপাহাড়ীতে রাস্তা তৈরির কাজ এখনই বন্ধ করার দাবিতে মাওবাদীরা যে পোস্টার দিয়েছে তার অস্বীকার করছে না পুলিশ জেলা। পুলিশের অফিসাররা বলেছেন, ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। সৌরভ রায় নামে লালগড়ের বাসিন্দা এক ঠিকাদার ওই রাস্তা তৈরির কাজ করছেন। কিন্তু কেন তাকে রাস্তা তৈরি বন্ধ করতে বলেছে মাওবাদীরা তা স্পষ্ট নয়।

এদিন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ঝাড়গ্রামে গিয়ে বৈঠক করলেও সেখানে সিআরপিএফ বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কোন প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। তাতে কিছুটা উষ্মা রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে। কেননা এখনো ঝাড়গ্রামে এবং পুরুলিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হলে যে তার সুফল সকলেই পেত তা মনে করছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তারা।