এক নজরে

বানভাসি খানাকুলে মমতা

By admin

August 03, 2021

কলকাতা ব্যুরো: দক্ষিনবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। গত কয়েকদিন ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় অনান্য অংশে জল কমলেও সরকারের এখন মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে হুগলি, হাওড়া, মেদিনীপুর ও বর্ধমানের এক বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃষ্টির জল ছিলোই, নদীগুলো উপচে পড়ছে। আর তারওপরেই গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়ায় এই জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ আকার নিচ্ছে। ঝাড়খন্ডে অতিবৃষ্টিতে অবস্থা সামাল দিতে বিভিন্ন নদীর বাঁধ থেকে জল ছাড়া হচ্ছে নিয়মিত। মাইথন, পাঞ্চেতের সঙ্গে তেনুঘাট বাঁধের জলে এখন তাই ভাসছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতিমধ্যেই মাটির বাড়ি ভেঙ্গে জলে ডুবে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই অবস্থা সামাল দিতে বুধবার খানাকুল যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার ওইদিনই ঘাটাল যাচ্ছেন অভিনেতা সাংসদ দেব।

হুগলির জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ যাদব জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। বুধবার খানাকুলের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি বন্যাদুর্গতদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। এর আগে সোমবার সকাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে করে প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধারকাজের ব্যবস্থা করেন দিলীপ যাদব।

জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুর ১টা ১৫ নাগাদ ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে রওনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। আকাশপথে হাওড়া ও হুগলির বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন তিনি। হুগলির খানাকুলের কাছে তাঁর হেলিকপ্টার নামবে। সেখানে তিনি প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রনে বৈঠক করবেন বলে সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টারের জন্য অস্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে হুগলির ঘোষপুর মান্নারডাঙার মাঠে।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা ঘাটালেরও। নিজের এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন সাংসদ দেব। জানা গিয়েছে, বুধবার সকালের দিকেই ঘাটালের উদ্দেশে রওনা দেবেন দেব। গোটা এলাকা খতিয়ে দেখবেন তিনি। স্থানীয় মানুষদের পরিস্থিতি দেখবেন। তাঁদের অসুবিধার কথা শুনবেন। বৃষ্টি কমলেও ঘাটালের অবস্থা এখনও বেশ খারাপ। বহু জায়গায় জমা জল রয়েছে। দাসপুর, চন্দ্রকোণা এলাকার ছবিও একই।

প্রসঙ্গত, জুন মাসে DVC ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় নদীর বাঁধ উপচে ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আর সেই সময় নিজের কেন্দ্রের বাসিন্দাদের অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন দেব।

আবহাওয়ার খবরের দিকে চোখ রাখলে জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার ভোর রাত থেকেই আকাশের মুখ ভার। ভোর রাতে কলকাতা এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও কোনও জায়গায় ভারী বৃষ্টিও হয়েছে। তবে সঙ্গে অস্বস্তির আবহাওয়া বজায় রয়েছে। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও, দক্ষিণবঙ্গের জন্য তা নেই।

মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ বুধবার সকাল পর্যন্ত হিমালয়ের পাদদেশ সংলগ্ন তিন জেলা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কালিম্পং-এ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বাকি জেলাগুলির কোথাও না কোথাও হাল্কা থেকে মাধারি বৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বাকি জেলাগুলিতে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। আপাতত দিনের তাপমাত্রার পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ বুধবার সকালের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও ভারী বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। সবকটি জেলারই কোথাও না কোথাও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে পরবর্তী ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ উপকূলে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে, যার জেরেই এই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। যদি এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে।