কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। আগামী ১৫ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই নিয়ে সকলকে সতর্ক করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তিনি জানালেন, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে আরও কড়া বিধিনিষেধ জারি করা হতে পারে। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘নিজেই জানি না কার কার কোভিড হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। দ্রুতহারে বাড়ছে সংক্রমণ। তবে ভয় পাবেন না। সতর্ক থাকুন।
এরপরই তিনি বলেন, হাত জোড় করে আপনাদের অনুরোধ করছি, মাস্কটা দয়া করে পরুন। গ্লাভস, স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে মাথায় টুপি, কাপড় ব্যবহার করুন। তবে যদি সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকে তবে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, রাজ্যে বিগত সাত-আটদিনের মধ্যে ৪৫ হাজার ৪১৭ জন রোগী পাওয়া গিয়েছে। হাসপাতালে ২৯২০ জন। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা খুব কম। রোগটা এবার মারাত্মক না হলেও সংক্রমণ খুব বেশি। তবে রাজ্যে কোভিডের জন্য ১৯৮টি হাসপাতাল রয়েছে। ১৯ হাজার ৫৭০ বেড রয়েছে। ৪১০০ ICU বেড রয়েছে। তবে কম উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই। পরপর তিনদিন জ্বর না হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। রাজ্যে এই মুহূর্তে পজিটিভিটি রেট ২৩.১৭ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১.১৮ শতাংশ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য এক নজরে
বিধিনিষেধ পুরোপুরি মানুন।
নাহলে যদি আরো বাড়ে তাহলে হয়তো আরো কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।
সিপি, ডিসি সাউথ এর করোনা হয়েছে।
আমার দুজন ড্রাইভারের করোনা হয়েছে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার একটা ভিডিও কনফারেন্স রয়েছে। সেটা আমি কালিঘাটের বাড়ি থেকেই করবো।
চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধন আছে।
বাড়ির কারও কোভিড পজিটিভ হলে সবাইকে আইসোলেশনে থাকা উচিৎ।
আমার বাড়িতে ছোটো ভাইয়ের বউ-এর কোভিড পজিটিভ।
তা স্বত্বেও বাবুন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। আমি খুব অফেন্ডেট এটা নিয়ে। আমি ওকে বারণ করেছি।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম।
আমি মনে করি প্রশাসন জোর করে কাউকে অ্যারেস্ট করে মাস্ক পরাতে পারে না, এটা নিজেদের বুঝতে হবে।
আমি বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলোকেও অনুরোধ করবো সবাইকে মাস্ক পরার বিষয়ে সচেতন করুন।
ট্রেন বন্ধ করলে তখন বলবেন কেন বন্ধ করলো? না করলেও বলবেন। তাহলে কি করবো বলুন তো।
২৬৭ টা মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন।
তবে অনেকেই কথা শুনছেন না।
আমি পুলিশকে বলবো একটু কড়া হাতে মোকাবিলা করতে।
পজিটিভিটি রেট বেড়েছে, ডেইলি কেস হচ্ছে ১৪ হাজার প্রায়।
তার মধ্যে কলকাতায় প্রতিদিন ৬ হাজার।
প্রতিদিন ৬০/৬১ হাজার করে টেস্ট হচ্ছে।
আমি সাগরে গিয়েছিলাম, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অফিসারের কোভিড হয়েছে।
ইন্টার স্টেট বর্ডার গুলোতে আরটিপিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক।
লোকবল কম থাকলে প্রয়োজনে ভলান্টিয়ার নিয়োগ করে করা হোক।
এতো দেখছি যাওয়ার আগে কাঁদিয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, প্রশাসন জোর করে কাউকে মাস্ক পরাতে পারে না। মানুষকে নিজেকেই সচেতন হতে হবে। কতদিন ধরে আর এইরকম পরিস্থিতি থাকবে। গত দু’বছর ধরে মানুষের জীবন-জীবীকা দুর্বিসহ। তা বলব বাংলা অনেক সেফ। আমাদের বাঁচাতে পারি আমরাই। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১০ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১৮ ঊর্ধ্বদের ৬ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার ১৩২ জন প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩ হাজার ৭৩৭ জন। ১৫ থেকে ১৮ বছরের মোট ৪ লাখ ৭০ হাজার ১০৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ৪০ শতাংশের টিকা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও জানান, রাজ্যে মোট মাইক্রো কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৪০৩।
হু হু করে ছড়িয়ে পড়া কোভিড সংক্রমণকে বাগে আনতে এই মুহূর্তে কী কী করণীয়, তা বিশদে এদিন বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এও বলেন, ট্রেন বন্ধ করে দিলে প্রচুর মানুষের অসুবিধা হবে। আবার ট্রেন চালু রাখলে সবাই গাদাগাদি করে যাবে। তাহলে আমরা কী করব? এগোব না পিছব? মানুষের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যাক, এটা তো হতে পারে না। তাই বলছি, আপনারা নিজেরা মাস্ক পরুন, সতর্ক হয়ে চলাফেরা করুন। তারপরই তাঁর বার্তা, এসবে যদি সংক্রমণ না কমে, তাহলে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদের। তাঁর এই মন্তব্যের পরই ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ধারণা, ১৫ জানুয়ারির পর থেকে আরও কড়া বিধিনিষেধ জারি হতে পারে রাজ্যে।
পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোমে’ জোর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান তিনি নিজেও অফিস যাচ্ছেন না। বাড়ি থেকে কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে একটি ক্যানসার হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে মোদি। সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে কালীঘাটের বাড়ি থেকেই ভারচুয়ালি উপস্থিত থাকবেন। সেখান থেকেই ভারচুয়ালি তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হতে পারে।