কলকাতা ব্যুরো: বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আপাতত তিনদিনের গঙ্গাসাগর সফরে। মঙ্গলবার সেখানে পৌঁছে কপিলমুনির আশ্রমে পুজো দিয়েছেন। আর তারপরই তাঁকে পাশে নিয়ে কার্যত ভবিষ্যৎবাণী করলেন আশ্রমের প্রধান জ্ঞানদাস মহান্ত। বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে মমতাকে কেউ রুখতে পারবে না। তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই আমরা।“ মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে উত্তরণের লক্ষ্যে এগোচ্ছে তৃণমূলও। জাতীয় স্তরে সংগঠন বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেইমতো বদলাচ্ছে কর্মসূচির ধরনও। নানা রাজ্য়ে সংগঠনের বিস্তার ঘটানোর কাজ চলছে পুরোদমে। এই পরিস্থিতিতে কপিলমুনির আশ্রমের মহান্তর কথা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বাংলার শাসকদল।
মঙ্গলবার বিকেলে কপিলমুনির আশ্রম থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। এই মেলার পবিত্রতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নালিশের সুর শোনা যায় তাঁর গলায়। গঙ্গাসাগরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন এখানকার মেলাকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বহুবার কেন্দ্রকে চিঠি লেখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি অনেকবার চিঠি দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে অনেকবার চিঠি লিখেছি গঙ্গাসাগরকে জাতীয় মেলা ঘোষণা করা উচিত। কুম্ভ যদি ওয়ান হয়, এটা টু পাওয়া উচিত। আমি মনে করি কুম্ভ থেকে এটা কিছুতেই কম নয়। কুম্ভ মেলা রোড কানেকটেড, রেল কানেকটেড। কিন্তু এটা জল পেরিয়ে আসতে হয়। সেই জন্যই সবাই বলে সব তীর্থ বার বার গঙ্গা সাগর একবার। কিন্তু আজ একবার যাঁরা গঙ্গাসাগরে এসেছেন তারা বারবার আসেন। আগে গঙ্গাসাগরে থাকার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। এখন কিন্তু সব ব্যবস্থা করা আছে। আপনারা যখন প্রশ্নের উত্তর না পেলে অপেক্ষা করেন আমাকেও অপেক্ষা করতে হবে।
এছাড়াও মমতা অভিযোগ করেন কুম্ভমেলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সহযোগিতা করলেও গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে তাদের কোনওরকম সহযোগিতা নেই। মমতা বলেন, কুম্ভমেলায় সব টাকা ভারত সরকার দেয়। কিন্তু এখানে এক পয়সাও দেয় না। যদি কুম্ভমেলা ওদের সুয়োরানি হয়, গঙ্গাসাগর কি দুয়োরানি হয়ে গেলো?
পাশাপাশি মমতা বলেন, মেলায় যাতায়াতের জন্য একটি ব্রিজ দরকার। হারউড পয়েন্ট থেকে কচুবেরিয়া পর্যন্ত ব্রিজ তৈরির বিষয়টি বহু বছর ধরে চলছে। বুড়িগঙ্গার উপর এই ব্রিজ তৈরি নিয়ে বাম আমল থেকে ফাইল চালাচালি চললেও এখনও পর্যন্ত কোনও সমাধান বেরোয়নি। এদিন এই ব্রিজ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই মেলায় এক পয়সা কেন্দ্র দেয় না। কুম্ভ মেলাতে সব কেন্দ্র দেয়। আমরা তাজপুর বন্দর নিয়ে বলেছিলাম। সেই কথাও রাখেনি। কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হবে এই সেতু তৈরিতে। টাকা পয়সা হাতে এলেই করা হবে। আমাদের কাজ আমরাই করে নেব।
এদিন কপিলমুনির আশ্রম থেকে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান ভারত সেবাশ্রম সংঘে। সেখানে পুজো দিয়ে, সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথাবার্তা বলেন। এখান থেকেই গঙ্গাসাগর এলাকার উপর প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিশ্বের অন্যতম সেরা মেলা এই গঙ্গাসাগর মেলা। প্রতি বছর প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ এখানে আসেন। যতই প্রকৃতির দুর্যোগ আসুক না কেন, গঙ্গাসাগর কিন্তু ঘুরে দাঁড়ায়।
মমতার কথায়, ইয়াস, আমফান, বুলবুল সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর আমরা চটপট করে উন্নয়নের সব কাজ করে দিয়েছি। তীর্থযাত্রী যাঁরা আসবেন, তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য সব ব্যবস্থা মেলা কমিটির তরফে জেলাশাসক করেছেন।