কলকাতা ব্যুরো: মধ্যমগ্রামের প্রশাসনিক সভায় এসে মেজাজ হারালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পাঁচ মহকুমা শাসক। জেলার পাঁচ মহকুমা শাসক সশরীরে সভায় উপস্থিত না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে সভা ছাড়েন মমতা। তবে কিছুক্ষন পর বাকিদের অনুরোধে সভায় ফিরে আসেন তিনি।  

এদিন পুরসভাগুলির কাজে এদিন অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘কাজ করলে পুরস্কার পাবেন। কাজ না করলে ভেবে দেখতে হবে।’ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্যদের মমতা বলেন, ‘আপনারা এলাকা ঘুরে দেখছেন না। এলাকার কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’ তবে পুরসভাগুলির কাজ ঠিকমত হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য প্রতিটি পুরসভায় একজন করে অবজার্ভার রাখার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের পুর দফতরকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত পুরসভা এবং পুরনিগমগুলিতে অবজারভার রাখতে হবে বলে তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই সমস্ত অবজারভারদের কী কাজ হবে, তাও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। 

এছাড়া বিভিন্ন পুরসভার কাউন্সিলরদের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা এদিন বলেন, ‘অনেক অভিযোগ রয়েছে। রাস্তাঘাট, জল, লাইটের কাজ করুন।’ ব্যারাকপুর, কামারহাটি, খড়দহ, দমদম পুরভার প্রধানদের থেকে কাজের খতিয়ান নেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা ঘোষণা করেন, ধাপে ধাপে সমস্ত পুরসভার নির্বাচন হবে। ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু নিয়েও পুরসভাগুলোকে সতর্ক হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিকে কলকাতা ও বিধাননগর কমিশনারেটের মধ্যকার দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ তুলে তা মেটাতে বলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘শীঘ্র দ্বন্দ্ব মেটান। নিজেরা বসে আগে ইগোর লড়াই মেটান। মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। চিংড়িঘাটায় এত দুর্ঘটনা কেন?’ এ দিন তিনি সরাসরি বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকারকে প্রশ্ন করেন, চিংড়িঘাটায় কেন রোজ অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে? কলকাতা পুলিশ বলে ওটা আমার নয়। বিধাননগর বলে ওইটুকু আমার, ওইটুকু কলকাতা পুলিশের। তোমাদের নিজেদের ইগোর লড়াইয়ের জন্য সাধারণ মানুষ কেন সাফার করবে?’ তিনি সাফ জানান এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।

মমতা আরও বলেন, পরপর কতগুলো অ্যাক্সিডেন্ট দেখলাম, যেটা হওয়ার নয়, হওয়ার ছিল না। ওখানে যার জন্য একটা ছোট ফুট ওভারব্রিজ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিধাননগর আর কলকাতা পুলিশ বসে সমস্যা মেটাবে। পাশাপাশি এদিন কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আর একটাও অ্যাক্সিডেন্ট যেন না হয়, আমি দেখতে চাই, মানুষের জীবন অনেক দামি। মমতা জানান জ্ঞানবন্ত সিং-এর সময়েও এই সমস্যার কথা বলা হয়েছিল।

তবে মমতা এই বার্তা দেওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই দেখা যায়,  চিংড়িঘাটায় পরিদর্শনে গিয়েছেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকার, রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে সহ একাধিক আধিকারিক। বেশ কিছুক্ষণ চিংড়িঘাটা মোড়ে দাঁড়িয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। কোথা দিয়ে মানুষ কী ভাবে যাতায়াত করবেন, তা নিয়েই আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর।

পাশাপাশি ১ জানুয়ারি দিনটিকে মা-মাটি-মানুষ দিবস হিসেবে পালন করে তৃণমূল সরকার। তবে এবার থেকে এই দিনটিকেই স্টুডেন্টস ডে বা ‘ছাত্র দিবস’ হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এই ঘোষণা করেছেন তিনি। ওই দিন যাতে একসঙ্গে অনেক ছাত্রছাত্রীকে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়, শিক্ষা দফতরকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি তৃণমূল দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে দলের সেই প্রতিষ্ঠা দিবসকে তিনি মা-মাটি-মানুষ দিবস হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করেন। এবার সেই দিনটিকেই পড়ুয়াদের জন্য বেছে নিলেন মমতা। তিনি জানান, ওই দিন পড়ুয়াদের ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

পাশাপাশি আগামী ২০ ডিসেম্বর রাজ্যে শিক্ষা মেলা করার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। মমতা জানান, ওই দিন ১০ হাজার পড়ুয়াকে ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। এছাড়া বিবেকানন্দ স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য ১২ জানুয়ারি দিনটিকে বেছে নেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে, শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে এ দিন জানানো হয়েছে, শিক্ষা মেলার দিন ক্যাম্প থেকে ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা এই দিন পড়ুয়াদের সরকারের তরফে ঋণ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প কবে হবে, সেই নিয়েও এ দিন আলোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ২ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত হবে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প। পরে মকর সংক্রান্তির জন্য কিছুদিন বন্ধ রাখা হবে। পরে ফের ২০ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্প চলবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version