কলকাতা ব্যুরো: সেন্ট্রাল পার্কের নাম পরিবর্তন। এবার থেকে ‘বইমেলা প্রাঙ্গন’ হিসাবেই পরিচিত হবে পার্কটি। সোমবার বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে একথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি এদিন বাংলা ও বাংলাদেশ নিয়ে আবেগে ভাসলেন তিনি। বলেন, দুই দেশে কোনও বিভেদ নেই। তারা একে অপরের চিরসাথী। সীমানা দিয়ে দুই বাংলাকে আলাদা করা যায় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সকলের শুভকামনাও করেন মমতা। সকলকে কমপক্ষে একবার মেলায় আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। আগামী বছর আন্তর্জাতিক সংগীত মেলার আয়োজন করা হবে বলেও এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রীর গলায় ধরা দিল বিশ্বশান্তির কথা। গুরুত্ব পেলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। প্রস্তাব দিলেন বিশ্বশান্তির পক্ষে থাকা ভারত যেন এই যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, আমি আজ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। কেন্দ্রের বিদেশ নীতির সমর্থন করার কথা জানিয়েছি। গণতান্ত্রিক পরিবেশে একটি রাজ্য যেভাবে কেন্দ্রের পাশে থাকে, সেভাবেই পাশে দাঁড়িয়েছি। বাংলা তথা ভারত বিশ্বশান্তির পক্ষে। গত দু-আড়াই বছর করোনা অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। সেটাও তো একটা যুদ্ধ। আমরা আর যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।

সোমবার শুরু হল ৪৫ তম কলকাতা বইমেলা। এবারের থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বইমেলার শুভ উদ্বোধন করেন। এবার বইমেলায় তাঁর ১০টি বই প্রকাশ হওয়ার কথা। এদিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ বইমেলায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী সুজিত বসু, সব্যসাচী দত্ত, মালা রায় এবং তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এদিন প্রথমে তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র স্টলের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর কলকাতা পুলিশের স্টল ঘুরে দেখেন। স্টলে থাকা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেন। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের স্টলে যান মুখ্যমন্ত্রী। স্টলে থাকা বইপত্রও নাড়াচাড়া করে দেখেন। একই সঙ্গে সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলায় যেতে মানুষের কোনও সমস্যা না হয়, সেই বিষয়টা দেখার জন্য পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দেন তিনি। যতদিন বইমেলা চলবে, ততদিন অতিরিক্ত বাস চালানোর কথাও বলেছেন তিনি।

জানা গিয়েছে, এবার মোট ৬০০টি স্টল রয়েছে। লিটল ম্যাগাজিনের স্টল ২০০টি। মেলায় ঢোকা ও বেরোনোর জন্য মোট ৯টি তোরণ রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি বঙ্গবন্ধুর লেখা বইয়ের আদলে। বঙ্গবন্ধুর নামে একটি গেটও রয়েছে। ২টি সত্যজিৎ রায় ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে। একটি বিশ্ববাংলা গেটও রয়েছে। মেলার ২টি হলের নাম দেওয়া হয়েছে সুভাষচন্দ্র বসু ও ঋষি অরবিন্দর নামে।

এছাড়াও লিটল ম্যাগাজিনের প্যাভিলিয়ান হবে কবি-সম্পাদক শম্ভু রক্ষিত ও প্রভাত চৌধুরী নামে। কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নামে রয়েছে মুক্তমঞ্চ। বইমেলার জন্য এবারও বিশেষ বাসের ব্যবস্থা হয়েছে। বিধাননগরের অটোচালকদের সঙ্গে কথা বলে নির্দিষ্ট ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। পিয়ারলেস হাসপাতালের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল সাহায্যের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এবারই প্রথম বইমেলায় অংশ নিচ্ছে ইরাক। এবারও সিইএসসির সাহায্যে থাকছে বইমেলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। মেলা পরিবেশবান্ধব হলো কিনা, সে বিষয়ে খেয়াল রাখবে বনদপ্তর। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষই এবার বইমেলামুখী হবে বলেই আশা প্রায় সকলের। সেকথা মাথায় রেখে নিরাপত্তায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। মেলাচত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। কোভিডের কারণে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর থেকে বইপ্রেমী বাঙালিদের মুখ ভার হয়েছিলো। তবে সোমবার বইমেলা সেই সব দুঃখের অবসান ঘটালো।