কলকাতা ব্যুরো: বগটুইয়ে নিহতদের পরিবারের ১০ জনকে চাকরির নিয়োগপত্র দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজে যোগ দিতে এই দশজনের যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয়, জেলাশাসককে তা দেখার নির্দেশ দিলেন তিনি।
সোমবার দুপুরে নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই ভারচুয়ালি বগটুইয়ে নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দেন চাকরির নিয়োগপত্র। মিহিলাল শেখ, হাসিনারা খাতুন, সাবিনা বিবি-সহ মোট ১০ জন এদিন রাজ্যের সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পান। নিয়োগপত্র দেওয়ার পরই জেলাশাসক-সহ জেলার আধিকারিকদের চাকরিপ্রাপকদের সাহায্যের নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগুনের কারণে অনেকের কাগজপত্র হারিয়ে গিয়েছে। জেলাশাসককে তাঁদের সাহায্য করতে হবে।
কোথায় কাজে যোগ দেবেন, কী কী প্রয়োজন, কীভাবে কাজে যোগ দিতে হয়, এই সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলেও, জেলাশাসককে সে বিষয়েও চাকরিপ্রাপককে সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ফের বলেন, চাকরি দিয়ে বা আর্থিক সাহায্য করলে কখনও মানুষ ফিরে আসে না। কিন্তু বেঁচে থাকার প্রয়োজনে প্রত্যেককে এগিয়ে যেতে হয়।যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা যাতে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারেন সেই জন্যই এই পদক্ষেপ।
উল্লেখ্য, ২১ মার্চ রাতে রামপুরহাটে বোমা মেরে খুন করা হয় তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখকে। এর পরই সেই রাতে বগটুই গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। সেই ঘটনার পরই বগটুইয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেদিনই নিহতদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির আশ্বাসও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১০ দিনের মধ্যেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে কয়লা-গরু পাচার কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে বারবার তৃণমূল নেতাদের দিকে তির ধেয়ে এসেছে। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার দিল্লিতে ইডি, সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। এসব নিয়ে এবার কার্যত গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে কেন্দ্রের উপরই সমস্ত দায় চাপালেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট অভিযোগ, কয়লা, গরু পাচারের উৎস অন্যত্র। কয়লা খনিগুলো পাহারা দেয় সিআইএসএফ। সীমান্ত দিয়ে গরু পাচারের বিষয়টি বিএসএফের দেখার কথা। এগুলো কিছুই আমাদের হাতে নেই। রাজ্যের কী করার আছে? আর এসব পাচারের উৎস অন্যত্র। কেন্দ্র সেই উৎস বন্ধে কোনও কাজ করছে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও বলেন, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, অসম থেকে গরু ও কয়লা পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু এই সবকিছুর উৎস তো অন্য জায়গায়। কেন কেন্দ্র পাচারের উৎস বন্ধ করতে সক্রিয় নয়? মমতার আরও বক্তব্য, লকডাউনের সময় থেকেই বর্ডার এলাকায় ট্রাক চলাচল নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে স্রেফ বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে চলেছে কেন্দ্র। বারবার যে কোনও ইস্যুতে কেন্দ্র বিরোধী সুর চড়ালেও কয়লা-গরু পাচার নিয়ে এবার গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি এদিন তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে ভাবে গত কয়েক দিনে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর দাবি, তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষের নজর ঘোরানোর জন্যই সিবিআই-ইডিকে ব্যবহার করা হচ্ছে, হিংসার তত্ত্বকে সামনে আনা হচ্ছে বলেও এ দিন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই চরম আর্থিক পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্তির পথ দেখানোর জন্য সর্বদল বৈঠকের দাবিও তোলেন তিনি।
সোমবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখান থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতি-পরিকল্পনা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন তিনি। মমতার কথায়, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। নীতি নেই। এখনও শ্রীলঙ্কার মতো কঠিন পরিস্থিতি আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। কিন্তু, যে কোনও সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এখনই বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে। সর্বদল বৈঠক ডেকে আলোচনা করা ছাড়া এর থেকে মুক্তির আর কোনও পথ নেই।
এদিন মমতা বলেন, একাধিক রাজ্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ফোন করছেন, অনুরোধ করছেন। একাধিক রাজ্য থেকে ফোন আসছে। কেন্দ্রীয় সরকার উদাসীন। এ ভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের মানুষ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে। কেন্দ্র গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ ভাবে চললে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।