কলকাতা ব্যুরো: শরৎ মানেই কাশফুল। অগাস্ট মাস থেকেই উৎসবের বার্তা নিয়ে হাজির হয় এই বুনো ফুল। দুর্গাপুজোর ঠিক আগে আগে বাংলার মাঠেঘাটে ভরে থাকে কাশে। শুধু গ্রাম বাংলাতেই নয়, শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে আনাচেকানাচে মাথা দোলায় কাশের গুচ্ছ। এবার এই বুনো ফুলই হতে পারে বাংলার নয়া কর্মসংস্থানের রাস্তা। বৃহস্পতিবার হাওড়ার শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে দিশা দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বাংলার মাঠেঘাটে কোনও কষ্ট না করেই যে এত কাশফুল হয়, তাকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কোনও শিল্পকেই ছোট করে দেখেন না। সেকথা তিনি আগেই জানিয়েছেন। শুধু তেলেভাজা নয়, মিষ্টির দোকান, কাপড়ের দোকান, চায়ের দোকান করেও যে অনেক উন্নতি করা যায়, তা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাতে গরম উদাহরণ দিয়ে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর পাড়ার এমন অনেক তেলেভাজার দোকানদের তিনি চেনেন যাঁরা তেলেভাজা বিক্রি করে চার-পাঁচ-দশতলা বাড়ি করেছেন। বড় ব্যবসাও করছেন।

তবে রাজ্যে কর্মসংস্থান এবং বৃহৎ শিল্পের অভাব নিয়ে যখনই সরকারকে কোণঠাসা করা হয়েছে, মমতা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জয়গানে মনোনিবেশ করেছেন। কখনও হস্তশিল্প, কখনও মৃৎশিল্প, কখনও কাঁথাশিল্পের প্রসারে উৎসাহ দেওয়ার কথা বলেছেন। উঠে এসেছে তেলেভাজা-মিষ্টি-ক্যারম বোর্ড শিল্পের কথাও। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন ছোট ব্যবসা খুবই ভাল। এক জন ১০টা ব্যবসা করতে পারেন।

এদিন হাওড়া শরৎ সদনে বৈঠকের মাঝে বিডিও-দের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা যায় কাশফুলের কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার একটা অন্য আইডিয়া আছে। এই যে আমাদের এখানে এত কাশফুল হয়। একমাসের জন্য ওই ফুল আসে আর ঝরে, উড়ে চলে যায়। তাকে অপচয় না করে বালিশ, বালাপোষ তৈরি করা গেলে কিন্তু, দারুণ হবে।’ এরপরই তিনি আধিকারিকদের বলেন, ব্যাপারটা দেখতে। কোনও কেমিক্যাল ব্যবহার করে কাশফুলকে বালিশ, তোষক তৈরির কাজে লাগানো যায় কিনা সে নিয়ে গবেষণা করারও নির্দেশ দেন।

এদিনের বৈঠক থেকে হাওড়ায় বিপুল বিনিয়োগের বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘হাওড়ায় একাধিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করা হবে। আগামী দুই বছরে সম্ভাব্য বিনিয়োগ আসতে চলেছে ১০ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হবে ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষের অর্থাৎ হাওড়াতে শিল্পে বিনিয়োগের ফলে রাজ্যে বিপুল কর্মসংস্থান হতে চলেছে, ইঙ্গিত দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘জমি নিয়ে যাতে শিল্পপতিদের কোনও সমস্যায় না পড়তে হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।’ এদিন জেলায় ৬০টি সুসস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের তরফে হাওড়ায় ২২৩টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।